আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সমালোচনা ও ‘জবাবদিহিতা’ দাবি করায় যুক্তরাষ্ট্রের এক মেরিন সেনা কর্মকর্তাকে আটক করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। অভিযুক্ত ওই সেনা কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে দেশটির নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ‘জবাবদিহিতা’র দাবি করায় এক সেনা কর্মকর্তাকে প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন মেরিন সেনা বিভাগ। অভিযুক্ত ওই মার্কিন মেরিন সেনা কর্মকর্তার নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট স্কেলার জুনিয়র।
সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইট টাস্ক অ্যান্ড পারপোজ’কে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন মেরিন সেনা দফতরের ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন কমান্ড’র মুখপাত্র ক্যাপ্টেন স্যাম স্টেফেনসন জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার জ্যাকসনভিলে মেরিন কর্পস বেজ ক্যাম্প লেজুন নামে একটি সামরিক ঘাঁটিতে বর্তমানে বন্দি আছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট স্কেলার জুনিয়র। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগে তাকে সেখানে আটক রাখা হয়েছে।’
ক্যাপ্টেন স্যাম স্টেফেনসন আরও জানান, বিচারের তারিখ ও স্থান এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে যখনই বিচারের মুখোমুখি করা হোক, স্কেলারের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
অভিযুক্ত ওই মার্কিন সেনা কর্মকর্তার বাবা স্টুয়ার্ট স্কেলার সিনিয়র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে সেনাসহ বেসামরিক মানুষদেরকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য জবাবদিহিতা দাবি করেছিলেন তার ছেলে।
সিনিয়র স্কেলার বলেন, ‘আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে আমার সন্তান এমন একটি প্রশ্ন সামনে এনেছেন, যেটি আসলে সবাই সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলেন, কিন্তু ভয়ে কেউই মুখে উচ্চারণ করতে পারছিলেন না।’
‘আফগানিস্তান ইস্যু নিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট স্কেলার জুনিয়রকে চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি মুখ খুলেছেন এবং তাকে আটক করা হয়েছে।’
সংবাদমাধ্যম আরটি বলছে, আফগানিস্তানে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কাজ করেছে সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করার পর কার্যত রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্ট স্কেলার জুনিয়র।
ভিডিওতে ওই সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘মানুষ ব্যথিত কারণ তাদের নেতারা তাদেরকে নিচে নামিয়েছে। কিন্তু এখন (আফগান ইস্যুতে) তাদের কেউই সাড়া দিচ্ছেন না বা দায়-দায়িত্বও নিচ্ছে না। অথবা তাদের কেউ এটাও বলছেন না যে- আমরা সেখানে একটি গোলমাল বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছি।’
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নেয় তালেবান। এরপর দেশটিতে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভয় আর আতঙ্কে হাজার হাজার আফগান নাগরিক কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করেন।
একপর্যায়ে সেখানে এক ভয়াবহ বোমা হামলায় কমপক্ষে ১৬০ জন বেসামরিক আফগান নাগরিক এবং ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফগান বিশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ খোলেন ওই মার্কিন সেনা কর্মকর্তা।