মানুষ কখন তার জীবনে সন্তুষ্ট বা সুখী তা বলা কঠিন। বেশিরভাগ সময়ে আমরা কারও মুখে হাসি দেখেই তাকে সুখী ভেবে ভুল করি। আবার কাউকে একা দেখলে কিংবা লড়াই করতে দেখলে আমরা ধরে নিই যে সে সুখী নয়। কিন্তু সেটি নাও হতে পারে। কখনও কখনও যারা নিজেকে অসুখী ভাবছেন তারা নিজেরাই জানেন না কেন তারা অসুখী। এটি আসলে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন।
অনেক সময় আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, অনুভূতি, আবেগ এবং মনস্তাত্ত্বিক সত্তা আমাদের সুখ নির্ধারণ করে। কিছু কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে যে আপনি অসুখী। তবে সেসব যে খুব স্পষ্ট, এমনও নয়। জেনে নিন সেসব সূক্ষ্ম লক্ষণ সম্পর্কে-
আপনি অতীতে বসবাস করতে চান
অবশ্যই আমাদের অতীত আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিই আমাদের বর্তমানকে সম্ভব করেছে। কিন্তু আপনি যদি আপনার অতীতের কোনো নেতিবাচক স্মৃতি বা ঘটনা নিয়ে পড়ে থাকেন তবে সেটি আপনার বর্তমানকে প্রভাবিত করে এবং এটি আপনার ভবিষ্যতেও প্রভাব ফেলতে পারে। যা আপনাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ অসুখী করে তুলতে পারে।
একটি বিষাক্ত শৈশব, একটি তিক্ত সম্পর্ক, একটি অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি, সবই এমন একটি পর্ব যা আপনার জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু আপনার কি এই ঘটনাগুলো আপনার বর্তমানে টেনে উচিত? একদমই না। আপনি যা হারিয়েছেন বা যা ইতিমধ্যেই ঘটেছে তা পরিবর্তন করতে না পারলেও, আপনি যে ভুলগুলো করেছেন তা থেকে শেখার আছে। সেইসঙ্গে আরও সুন্দর ভবিষ্যত আপনি চাইলেই গড়তে পারেন।
বিরক্তি পুষে রাখেন
জীবনে অনুশোচনা এবং বিরক্তি থাকবেই। কিন্তু আপনি কি ক্রমাগত বিরক্ত হতেই থাকবেন? সবকিছু থেকে আনন্দ মুছে ফেলবেন? এই কাজ একদমই করতে যাবেন না। যারা আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে তাদের প্রতিদান দেওয়া বা প্রতিশোধ নেওয়ার উপায় খুঁজে বের করলে তা কেবল আপনার সময়ই নষ্ট করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার বিরক্তি কেবল বাড়বে এবং এটি আপনাকে এতটাই গ্রাস করবে যে আপনি নিজেই একজন বিরক্তিকর মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবেন। এটি এতটা আপনাকে তিক্ত করবে এবং ঘৃণায় পূর্ণ করবে, যে কেউ আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না।
তাই এই ধরনের চিন্তা চিন্তা করার পরিবর্তে এটি ছেড়ে দিতে শিখুন। আপনার জীবনকে অগ্রাধিকার দিন এবং পরিকল্পনা করুন, আপনার স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্য রাখুন। আপনার অতীত যতই হতাশাজনক হোক না কেন, আপনি কীভাবে পৃথিবীতে পরিবর্তন আনতে পারেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন।
মানুষ কী বলবে তা নিয়ে আপনি চিন্তিত
মানুষ পেছনে কথা বলবেই। আপনি চাইলেও তাতে বাধা দিতে পারবেন না। জনে জনে গিয়ে মুখ বন্ধ রাখা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। এটি একটি জীবনেরই অংশ ধরে নিন। হয়তো অনেক সময় আপনিও এর চর্চা করে থাকেন। মানুষ আপনার সম্পর্কে কী বলবে তার ভিত্তিতে আপনার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকলে বুঝবেন, আপনি আর আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই।
একটি সমাজে নিয়ম-কানুন মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনই আপনার হৃদয়ের কথা শোনা এবং আপনি যা সঠিক মনে করেন তা করাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আশেপাশের মানুষের ওপর আপনি কী প্রভাব ফেলতে পারেন তা নিয়ে ক্রমাগত উদ্বিগ্ন হওয়া, মানুষ কী বলবে সেই ভয়ে থাকা আপনাকে কেবল অসন্তুষ্ট করবে। মানুষের পছন্দমতো চলা হয়তো আপনাকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্ব কীসে সন্তুষ্ট তা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন।
সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান
সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই সবকিছু নিয়ে ভাবতে যাবেন না। আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন নিজেকে নিরাপদ রাখার, নিজের জীবনটা গোছানোর। এমনকিছু বিষয় থাকে যা আমাদের নাগালের বাইরে। ভবিষ্যতের কিছু বিষয়ে আপনি চাইলেও পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তাই এটি সময়ের হাতে ছেড়ে দিন। কী ঘটতে চলেছে, কীভাবে বিষয়গুলো উদ্ঘাটিত হতে চলেছে সে সম্পর্কে চিন্তা করতে থাকলে তাআপনাকে আরও উদ্বিগ্ন করবে এবং চাপে ফেলে দেবে। আপনি আপনার বর্তমানকে বাঁচাতে ব্যর্থ হবেন এবং এমন সব সুন্দর জিনিস মিস করবেন যা আসলে আপনার জীবনে সুখ আনতে পারতো।
নিজের সিদ্ধান্তে আস্থা নেই এবং সব সময় নেতিবাচক ভাবেন
ভুল করাই মানুষের স্বভাব। ত্রুটিপূর্ণ হওয়াটা দোষের কিছু নয়। আপনার পছন্দ এবং সিদ্ধান্তগুলো যেকোনো দিকে যেতে পারে- ভালো বা খারাপ। কিন্তু নিজের ওপর আস্থা না রাখলে, নিজেকে একটি বিশেষ সিদ্ধান্তের জন্য ভুল বলে দোষারোপ করলে তা কেবল আপনার মনের উপর দাগ ফেলবে। কখনোই সবচেয়ে খারাপটা ধরে নেবেন না। আপনার নিজের এবং আপনার সিদ্ধান্তের ওপর বিশ্বাস রাখা গুরুত্বপূর্ণ।