অর্থনীতি ডেস্ক:
বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধারাবাহিক কমছে। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে আরও ৫ পয়সা বেড়ে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। তবে খোলাবাজার ও নগদ মূল্যে ডলার আরও বেশি দাম অর্থাৎ ৮৮ থেকে ৮৯ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারের চাহিদা মেটাতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরও বেড়েই চলছে দাম।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে আমদানি চাপ বেড়েছে। ফলে এর দায় পরিশোধে লাগছে বাড়তি ডলার। এ কারণে ডলারের দর বাড়ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ রয়েছে। এখন বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলো চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করেছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে এখন ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৮৬ মিলিয়ন ডলার (৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার) বিক্রি করা হয়েছে।
গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত নিচ্ছে। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশিরভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার বেশি। কয়েকটি ব্যাংকে নগদ ডলারের মূল্য ৮৮ টাকাও ছাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মহামারির শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ে যে চাঙা ভাব ছিল, চলতি বছরের জুন থেকে সেখানে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ১৮১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৫ টাকা ধরে)। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ।
একইভাবে রফতানি আয়ও কমেছে। গত জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে দশমিক ৩১ শতাংশ। গত বছরের জুলাই মাসে আমদানি বাবদ ৪২২ কোটি ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে খরচের এ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে আমদানি খরচ বেড়েছে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এসব কারণে ডলারের চাহিদা বাড়ছে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চাইলেও বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা আছে। যাকে নেট ওপেন পজিশন বা এনওপি বলে। যদি কোনো ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার মজুত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়। আর না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুণতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।
বিএসডি/আইপি