প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী করতে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সরকারের দুই শতাংশের সঙ্গে কয়েকটি ব্যাংক আরও এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সুফল পাচ্ছে। বাড়তি প্রণোদনার সুফল মেলায় এবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় রেমিটেন্সের প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশমাসেই রেমিটেন্স এসেছে দুই হাজার ৬৬টি ডলার। ঈদকে সামনে রেখে এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২০৬ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে রেমিটেন্সের প্রণোদনা দেওয়া শুরু হলেও বৈধপথে প্রবাসীরা এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ১৭৯ কোটি ডলার বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৬৪১ কোটি ডলার।
বৈধপথে রেমিটেন্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে করোনা মহামারির মধ্যে গেলো বছরের শুরুর দিকে ব্যবসার কৌশল হিসেবে সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক। পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংক এবং বেসরকাররিখাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে। ১০ হাজার টাকার বেশি রেমিটেন্স পাঠালে গেলো বছরের ডিসেম্বরে বাড়তি এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি বিকাশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়ের অংশ হিসেবে বৈধপথে পাঠানো রেমিটেন্সের প্রণোদনা দুই শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে চার শতাংশ করা যেতে পারে। এটি করতে সরকারের অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও বৈধপথে প্রবাসী আয়ের চলমান ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আগামী বছর প্রবাসী আয় বাড়ত পারে ২০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে ব্যাংক তিনটি বাড়তি প্রণোদনার সুফলও পেয়েছে।
সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কারণে এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রীয় মালকানাধীন রূপালী ব্যাংকের রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৪ শতাংশ। ২০২০ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে ৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ২০১৯ সালের ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বৈধপথে রেমিটেন্স বাড়াতে সরকারের দুই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে রূপালী ব্যাংকই প্রথম আরও এক শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে, যাতে তারা বৈধপথে দেশে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হন।
রেমিটেন্স আহরণের প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স আয়ে ব্যাংকটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ২০২০ সালে ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আগের বছর ২০১৯ সালে এসেছিল ৩৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
রেমিটেন্স আহরণের প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২০ সালে রেমিটেন্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে এসেছিল ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনার সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক আরও এক শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, মহামারি করোনার মধ্যেও প্রবাসী আয় রেমিটেন্স পাঠানো সচল রয়েছে। চলতি বছর প্রবাসী আয় ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী বছর বাড়বে আরও ২০ শতাংশ। করোনার প্রভাব কেটে গেলে হুন্ডিতে লেনদেন বাড়তে পারে। এতে রেমিটেন্সের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এসব কিছু বিবেচনা করে রেমিটেন্সের প্রণোদনা দুই শতাংশ বৃদ্ধি করে চার শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ইমরান আহমদ।