নীতিমালা জারি হলেও চলতি অর্থবছর নতুন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে না। আগামী অর্থবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সম্মতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
প্রয়োজন হলে অর্থের পরিমাণ আরও বাড়ানো হতে পারে। এ অর্থ দিয়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে চলতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নীতিমালা জারি হলেও চলতি অর্থবছরে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও দেয়া সম্ভব নয়। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সে অর্থ দিয়ে নতুন করে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া শর্তগুলো আপাতত শিথিল করা হতে পারে। ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে
সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে এমপিওভুক্তির সংশোধিত নীতিমালা জারি করা হয়। নীতিমালা জারির পর নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেয়া হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ অর্থ ছাড় না দেয়ায় সে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। অর্থ ছাড়ে প্রস্তাবিত সংশোধনীসহ এ সংক্রান্ত নথি ও নতুন নীতিমালার খসড়া অর্থ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপরই অর্থ বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সাতটি শর্ত জুড়ে দেয়।
সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের স্বীকৃতির শর্ত তুলে দেয়ার বিরোধিতা করে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়ার শর্ত গার্লস কলেজের জন্য ছাড় দিয়ে সেখানে এ সংখ্যা আগের মতোই বহাল রাখতে বলে অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, মানসম্মত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে এবং সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষায় সব শিক্ষক-কর্মচারীকে একসঙ্গে নিয়োগ না করে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে করতে হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা সদর এবং পৌরসভায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পদবহির্ভূত অতিরিক্ত কর্মচারীর পদ (যেমন- অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী এবং আয়া) নতুনভাবে সৃষ্টি না করে, এসব পদে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন হলে নিজস্ব অর্থায়নে নিয়োগের বিধান রাখতে হবে।
মফস্বল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কম থাকায় প্রস্তাবিত নীতিমালায় শুধু এসব এলাকার ক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-অষ্টম), মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-দশম) এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ষষ্ঠ-দ্বাদশ) ‘অফিস সহায়কের’ একটি করে নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
নতুন কারিগরি ও মাদরাসা এমপিওভুক্তিকরণে ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হলেও ৫০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে বাকি ৫০ কোটি টাকা দেয়া হবে বলে অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হয়। সে মোতাবেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। আগামী অর্থবছর কতগুলো এর আওতায় আনা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি
অর্থ বিভাগের তরফ থেকে আরও বলা হয়, জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এমপিওভুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে সরকার যে কোনো প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আদেশ দিতে পারবে—এ বিধানের পরিবর্তে এমপিও নীতিমালা ও বাজেট বরাদ্দের আলোকে শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইপূর্বক সুপারিশের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার বিধান রাখতে হবে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অন্যান্য শর্তাবলির সঙ্গে হালনাগাদ স্বীকৃতি বা অধিভুক্তির শর্তও বহাল রাখতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শুধু নারীদের জন্য পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ বা স্নাতক কলেজের জন্য কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতো আনুপাতিক হারে কম রাখতে বলা হয়।
জানা গেছে, সংশোধিত নীতিমালায় এসব শর্ত পূরণ না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের জন্য এমপিওভুক্তির প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে ফেরত দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকের পর সংশোধিত নীতিমালা বাস্তবায়নের ভিত্তিতে আগামী অর্থবছর এমপিওভুক্তিকরণে অর্থ ছাড়ের সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আগামী অর্থবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৩১ কোটি ৭০ লাখ এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে ৯ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা (দুই বিভাগ মিলিয়ে ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা) বরাদ্দে অর্থ বিভাগ থেকে সম্মতি দেয়া হয়। তার মধ্যে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য ২০০ কোটি, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তিতে ১০০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়। গত ১৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে এ বরাদ্দের সম্মতি দেয়া হয়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, রুটিন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দের বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ দেয় সরকার। এবারও সেটি হবে।
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা জারি হলেও চলতি অর্থবছর নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও দেয়া সম্ভব নয়। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই। এমপিওভুক্তির জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সে অর্থ দিয়ে নতুন করে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া শর্তগুলো আপাতত শিথিল করা হতে পারে। ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনায় সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। তবে এবারের নীতিমালায় এমপিওভুক্তিতে পাসের হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বেশকিছু কঠোর শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এসব শর্ত মেনে জুনে বাজেট অনুমোদন হওয়ার পর সফটওয়্যার সংশোধন করে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করতে অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।
জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের বাজেট শাখার যুগ্ম-সচিব মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন কারিগরি ও মাদরাসা এমপিওভুক্তিকরণে ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হলেও ৫০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হবে। প্রয়োজন হলে বাকি ৫০ কোটি টাকা দেয়া হবে বলে অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হয়। সে মোতাবেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। আগামী অর্থবছর কতগুলো এর আওতায় আনা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’