নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা ও যানজট নিরসনে ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের’ পরীক্ষামূলক যাত্রায় থাকবে ১২০টি নতুন বাস; আর এর মধ্য দিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একটি নতুন কোম্পানি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিমি দৈর্ঘ্যের প্রস্তাবিত রুটে এ যাত্রা শুরু হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির ১৮তম সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এ ঘোষণা দেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরে ১৪তম সভায় এ বছর এপ্রিল থেকে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক সময় নির্ধারণের কথা জানিয়েছিল কমিটি।
মঙ্গলবার কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রস্তাবিত রুটে চলাচলকারী সব বাস হবে নতুন। এতে রুটে বাস পরিচালনাকারী বর্তমান পরিবহন মালিকরা সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি তাপস।
তিনি বলেন, “ঘাটারচর থেকে কাচপুর রুটে পুরোনো বাস চলবে না। এখন এ রুটে যে বাসগুলো চলছে, সেগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারির পর কেনা বাস থাকবে। বাকি বাসগুলো উঠিয়ে নেওয়া হবে। এর সঙ্গে নতুন বাস যোগ হবে।
“সব মিলিয়ে এ রুটে ১২০টি নতুন বাস চলাচল করবে। এ প্রস্তাবে পরিবহন মালিকসহ সকলেরই সম্মতি রয়েছে।”
ফাইল ছবিফাইল ছবিএ রুটে চলাচলকারী পরিবহনের নাম ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ করা হবে বলে জানান কমিটির সভাপতি তাপস।
এ রুটে কার্যক্রম শুরুর পর পর্যায়ক্রমে এ ‘ক্লাস্টারের’ বাকি যাত্রাপথগুলোর কার্যক্রম শুরুর কথা বলেছেন তিনি। এরপর অন্য রুটের কাজে হাত দেবেন তারা।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা এবং যানজট নিরসনে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন রুটে পরিবহন সংস্থাগুলোর বাসের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে এবং পুরনো বাস তুলে নিতে এমন পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা শুরু হয় প্রায় দেড় দশক আগে। সেই পরিকল্পনাই অবশেষে বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে।
এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির কাছে রাজধানীতে নয়টি ক্লাস্টারের মাধ্যমে ২২টি কোম্পানির ৪২টি রুটে বাস রুট রেশনালাইজেশনের প্রস্তাব দেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে এসব ক্লাস্টার চূড়ান্ত করেছে এ কমিটি।
কোভিড মহামারীর মধ্যেও বর্তমান কমিটি পুরোদমে কাজ করছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, “ফলশ্রুতিতে আজকে আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি- যেটা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছিল, যেটা অত্যন্ত জটিল, দূরহ সমস্যা ছিল, তা আমরা সমাধানের কাছাকাছি নিয়ে এসেছি। আজকে আমরা একটি চূড়ান্ত তারিখ দিতে পারছি।
ঘাটারচর-মতিঝিল রুটে ৫ কোম্পানির অধীনে বাস চলবে এপ্রিলে: তাপস
ঢাকায় ২২ কোম্পানির মাধ্যমে বাস চালানোর ভাবনা
ঢাকায় চলাচলরত বাস দিয়েই কোম্পানি করার চিন্তা
ঢাকার সীমান্তে হবে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল: তাপস
মার্চের মধ্যে ঢাকায় ছয় বাস কোম্পানি, মেয়র খোকনের আশা
“ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর- এ পাইলটিং রুটে নতুন নিয়মে, নতুন পদ্ধতিতে বাস চলবে। এর ফলে নতুন বাসের মাধ্যমে জনগণকে মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।”
বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বর্তমান পর্যায়ে উন্নীত হওয়া সম্ভব হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “আশা করছি আগামী ১ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী তাজুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ঘাটারচর টু কাঁচপুর রুটের উদ্বোধন করবেন।”
এ জন্য প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তাপস বলেন, “বাকি যে সময় আছে, এর মধ্যে বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করব ইনশাল্লাহ।”
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “এ রুটে চলাচলকারী পরিবহনের ড্রাইভার ও হেলপারের একটি নির্দিষ্ট পোশাক থাকবে। আগামী ২০ তারিখে এ রুটে চলাচলকারী বাসের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে। “আমরা মনে করি, পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।“
ফাইল ছবিফাইল ছবিনতুন রুটে ৪০টির বেশি যাত্রী ছাউনি করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাস বে হবে ১৬টি। জায়গা সংকটের কারণে এ সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।
এছাড়া এ রুটের বাসগুলোর রঙ কী হবে, তা আগামী ১৪ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পরে ২০ অক্টোবর বাসের রঙ নির্ধারণ করা হবে।”
সভায় ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিনসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন আহম্মদসহ দুই সিটি করপোরেশনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি/ আইকে