নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী ১০ অক্টোবর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে।
এটি পাারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্রের প্রধান অংশ। এর মাধ্যমে প্রকল্পের মাইল ফলক অগ্রগতি সাধিত হতে যাচ্ছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিয়্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আর বেশি সময় লাগবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জটিল কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। চলতি বছরেই প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হবে।
গত ২০১৭ সালের নভেম্বরে এই প্রকল্পের রিয়্যাক্টর ভবনের কংক্রিট ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে মূল কাজ শুরু হয়। এই কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকে এই প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। এর পরের বছর জুনে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পরমাণকি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) বা ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তার মূল কাঠামো হচ্ছে রিয়্যাক্টর। এটিই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাণ।
পারমাণবিক প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (আইএইএ) গাইড লাইন অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজনদারির মধ্য দিয়েই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর স্থাপন প্রসঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বড় অগ্রগতিতে পৌঁছে গেছি। এই বড় অগ্রগতির মধ্য দিয়ে আমরা বলতে পারি, নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
রাশিয়ার আর্থিক, কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন-রোসাটম এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। রোসাটমের ডিজাইনে নির্মাণাধীন দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই প্রকল্পে স্থাপন করা করা হচ্ছে রাশিয়ার উদ্ভাবিত এখন পর্যন্ত সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের রিয়্যাক্টর। এটা একমাত্র রাশিয়ার নভোভরোনেস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। তাই রূপপুর প্রকল্পকে নভোভরোনেসের রেফারেন্স প্রকল্প বলা হয়।
এদিকে রূপপুর প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে রাশিয়ায়। সেখানকার বিভিন্ন কারখানায় এই যন্ত্রগুলো তৈরি করে সমুদ্র পথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এ বছর আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটের রিয়্যাক্টরও এসেছে।
স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পই দেশের সবচেয়ে বড় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সর্বাধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর সিংহভাগ অর্থই সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে রাশিয়া সরবরাহ করছে। আগামী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
জানতে চাইলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে বলেন, ৬ট মূল কম্পোনেন্টের মধ্যে ৪টিই ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়ে গেছে। এখন বাকি রয়েছে রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল, যেটি ১০ অক্টোরবর স্থাপন করা হবে। প্রথম ইউনিটের যত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সবগুলো বসে যাচ্ছে।
শৌকত আকবর বলেন, চলতি বছরের মধ্যে আমরা প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করবো। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিটের কাজ সম্পন্ন করতে পারবো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এই রিয়্যাক্টর স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করবেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
বিএসডি/আইপি