নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেট নগরীর মেজরটিলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকার রাবেয়া বেগমের বাড়ি থেকে অজগর উদ্ধার করা হয়। গত ১ ও ২ অক্টোবর একই বাড়ি থেকে আরও দুটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রথম দু’দিন রাবেয়া বেগমের ঘর থেকে উদ্ধার করা হলেও শুক্রবার তার দেবরের মুরগির খামার থেকে অজগর সাপটি উদ্ধার করা হয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মেজরটিলা, আলুরতল ও বালুচর এলাকার তিনটি বাড়ি থেকে তিনটি অজগর সাপ উদ্ধার করেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। এই তিনটি বাড়ি টিলাগড় ইকোপার্ক সংলগ্ন হওয়ায় সেখান থেকে অজগরগুলো খাবারের সন্ধানে আশপাশের বাসাবাড়িতে হানা দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
রাবেয়া বেগম জানান, সকালে মুরগির খামারে সাপ দেখতে পেয়ে জা (দেবরের স্ত্রী) তাকে ডেকে আনেন। ঘন ঘন ঘরে সাপ আসায় আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে আতঙ্কিত না হয়ে বন বিভাগের কর্মী ও পরিবেশকর্মীদের খবর দিই। তারা এসে সাপটি উদ্ধার করে নিয়ে যান। গত ৬ মাসে তাদের বাড়িতে পাঁচটি অজগর সাপ ঢুকেছে বলে জানান রাবেয়া।
ছয় মাস আগে রাবেয়া বেগমের বাড়িতে দুটি অজগর সাপ প্রবেশ করলে স্থানীয়রা সেগুলো মেরে ফেলে। শুক্রবার সকালে বাড়িতে আবার সাপ পাওয়ার খবরে আশপাশের উৎসুক মানুষ ভিড় করেন। এ খবর পেয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমি সন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবিরও ছুটে যান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আলুরতল ও বালুচর এলাকার দুটি বাড়ি থেকে আরও দুটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। দুই দিনে উদ্ধার করা তিনটি সাপ একসঙ্গে অবমুক্ত করা হয়েছে।
দুপুরে বন বিভাগের কর্মীদের সহায়তায় উদ্ধার করা তিনটি সাপ টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করা হয় বলে জানান আশরাফুল কবির।
বন বিভাগের বনরক্ষী মাসুক করিম বলেন, বনে খাবার সংকটের কারণে সাপগুলো লোকালয়ে এসে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। যেসব বাড়িতে হাঁস-মুরগি আছে, গন্ধ শুকে অজগর সেসব বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তবে হাঁস-মুরগি খাওয়া ছাড়া অজগর মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
সিলেট অঞ্চলকে ‘অজগরের হটস্পট’ অভিহিত করে বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সিলেটে প্রচুর অজগর সাপ রয়েছে। বিশেষ করে এখানকার চা-বাগানগুলো অজগরের নিরাপদ আশ্রয়।
তিনি বলেন, আগে চা-বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেত, যা অজগরের প্রিয় খাদ্য। এখন এসব কমে গেছে। ফলে অজগর খাদ্য সংকটে পড়ে লোকালয়ে আসছে।
ডিএফও সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অজগর বাড়িতে ঢুকে পড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অজগর খুবই নিরীহ ও বিষহীন সাপ। নিজে আক্রান্ত না হলে সে কাউকে আক্রমণ করে না। আবার কামড় দিলেও বিষক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা নেই। শুধু ঘরের হাঁস-মুরগি লুকিয়ে রাখতে পারলে এই সাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
বাসাবাড়িতে অজগর দেখতে পেলে হত্যা না করে বন বিভাগকে খবর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি ।
বিএসডি /আইপি