আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নজিরবিহীন কয়লা সংকটের মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ভারত। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, দুদিনের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কয়লা না দিলে অন্ধকারে ডুবে যাবে রাজধানী শহর নয়াদিল্লি। শনিবার (৯ অক্টোবর) এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
তিনি বলেছেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম এক মাসের কয়লা মজুত থাকা উচিৎ। যদিও দিল্লির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কয়লার মজুত একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেছে। যা রয়েছে- তাতেও বড়জোর একদিন চলবে। এর মধ্যে কয়লা না পেলে রাজধানীতে ‘ব্ল্যাকআউট’ পরিস্থিতি তৈরি হবে।
দিল্লিকে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে দ্রুত কয়লা সরবরাহের আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখেছে স্থানীয় সরকার। মহামারি করোনা ভাইরাসের সংকটময় সময়ে অক্সিজেনের মতো কয়লার সংকটও তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সত্যেন্দ্র। তার ভাষায়, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। এখন সংকট বানিয়ে সেটি সমাধান করে প্রচার পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
আচমকা কেন এই সংকট?
দুদিন আগে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজের প্রতিবেদনে ভারতের কয়লা ঘাটতি পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়- ভারত এক অভূতপূর্ব জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে। সেখানে কয়লা নির্ভর মোট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১৩৫টি। দেশটির মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এসব কেন্দ্র। তবে এগুলোর অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা মজুত রয়েছে মাত্র তিন দিনের।
বিবিসি নিউজের খবর অনুসারে, ভারতের এই কয়লা সংকট হুট করে নয়, বরং বহুদিন যাবত তিলে তিলে তৈরি হয়েছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় গত দুই মাসে ভারতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম বেড়েছে অন্তত ৪০ শতাংশ। যার ফলে ভারতীয়দের কয়লা আমদানি দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ভারতে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ কয়লার মজুত থাকা সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা আমদানি কারক। কিন্তু তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রধানত দেশীয় কয়লা ব্যবহার করে থাকে। এটি চাপে থাকা স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি বিপদে ফেলেছে।
সংকট মিটবে কবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিক পরিমাণে কয়লা আমদানি করে ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা মেটানোর আপাতত কোনো সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গটি নিয়ে ভারতীয় অর্থনীতিবিদ ড. অরুণদ্বীপ নন্দী বলেছিলেন, কয়লা ঘাটতি আমরা অতীতেও দেখেছি। তবে এবার যা হচ্ছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব।
কয়লা এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যদি দামি কয়লা আমদানি করি, তাহলে আমার (বিদ্যুতের) দামও বাড়াব। দিনশেষে এসব খরচ ভোক্তাদের ওপর দিয়েই যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতির একটি প্রভাব রয়েছে- যা এটি (কয়লা আমদানি) থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই আসতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিং পরিস্থিতি ‘খুবই অনিশ্চিত’ বলে স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ভারতকে আগামী পাঁচ-ছয় মাস বড় সংকটের জন্য তৈরি থাকা উচিৎ।
বিএসডি /আইপি