সরকারি সফরে ইসরায়েলে গেছেন বিদায়ী জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে ইসরায়েলে এটিই তার সর্বশেষ সফর। তবে এই বিদায়ী সফরেও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে তার মতবিরোধ সামনে উঠে এসেছে।
রোববার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। রোববার মেরকেল জানিয়েছেন যে, ইরানের সাথে আন্তর্জাতিক পরমাণু সমঝোতা পুনরায় চালু করাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে জার্মানি। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধী ইসরায়েল।
মেরকেল আরও বলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কয়েক দশকের পুরোনো সমস্যা সমাধানে দুইটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনই সবচেয়ে ভালো সমাধান বলে বিশ্বাস করে জার্মানি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে- আমরা একটি আশাহীন অবস্থায় আছি। এরপরও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে। এটি ছুড়ে ফেলা ঠিক হবে না। এর ফলে ফিলিস্তিনিরা আলাদা একটি রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।’
দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ আসলে ফিলিস্তিনিদের জন্য অসহযোগিতামূলক বলেও উল্লেখ করেন মেরকেল। তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি নির্মাণকারী সাবেক এই নেতা দাবি করেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী- ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অর্থ হলো একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আমার বাড়ি থেকে এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের দূরত্ব হবে মোটামুটি মিনিট সাতেকের।’
বেনেটের উপস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমকে মেরকেল বলেন, জার্মানির কাছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার ভাষায়, ইহুদিদের সঙ্গে অতীতে যা ঘটেছে সেজন্য জার্মানি এখনও দুঃখিত। কিন্তু এখন জার্মানিতে ইহুদিরা শান্তিতে বসবাস করতে পারেন। অতীত ইতিহাস ভুলে জার্মানি এবং ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
বেনেটও দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মেরকেলকে। ১৬ বছরের চ্যান্সেলর জীবনে আটবার ইসরায়েল সফর করেছেন মেরকেল। এটিই চ্যান্সেলর হিসেবে তার শেষ সফর। তবে সর্বশেষ এই সফরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তিনি দেখা করেননি। ফিলিস্তিনের প্রশাসকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন না মেরকেল।
এদিন ইসরায়েলেই ইরান নিয়ে একাধিক কথা বলেন মেরকেল। তার বক্তব্য, ইরান পরমাণু চুক্তিতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যত দ্রুত তা সম্ভব হয়, ততই মঙ্গল। এর জন্য রাশিয়া এবং চীনের রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই একই দিনে জাতিসংঘ একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, ইরান আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করে ফেলেছে। ইরান অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, পরমাণু চুক্তিতে নতুন করে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তারা অনেকটাই এগিয়ে গেছে।