অর্থনীতি ডেস্ক:
পছন্দ না হলেই মালিকরা যাতে হুটহাট করে বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) বাদ দিতে না পারেন এমন আইন করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বি এম ইউসুফ আলী।
সোমবার (১১অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) ও ইনস্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে দাবি জানান তিনি।
বিএম ইউসুফ আলী বলেন, বিমা খাতে যোগ্য সিইওদের সংকট রয়েছে। অনেক কোম্পানি ভারপ্রাপ্ত সিইও দিয়ে চলছে। যেসকল কোম্পানি থেকে সিইও অনুমোদনের জন্য আইডিআরএর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেগুলা দ্রুত দেওয়ার অনুরোধ করছি। বিমা খাতে সিইওদের হুটহাট করে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছে মালিকরা। আজকে অফিস করছে কালকে অফিস থেকে চাকরি চলে যাবে না এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারছে না। ফলে সিইওরা খাবারের টিফিনকারিটাও রেখে বাসায় যেতে পারছে না। কারণ অফিসে টিফিনকারীটা রেখে গেলে কাল যে অফিসে এসে নিতে পারবে, সেই সুযোগও থাকছে না। অফিসে ঢুকবার আগেই চাকরি থেকে বহিষ্কারের চিঠি পিয়নের হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় বড় সংকটের মধ্যে দিন পার করছেন সিইওরা।
আইডিআরএর চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সিইওদের সুরক্ষা দিতে হবে। মালিকরা যাতে হুটহাট করে চাকরি থেকে বাদ না দিতে পারে এমন আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। যদি কোনো সিইও দোষী কিংবা অপরাধী হয় তাকে অন্তত পক্ষে ৩ মাসের সময় দিতে হবে। এমন একটি সার্কুলার করুন।
অনুষ্ঠানে রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের সিইও খালেদ মামুন বলেন, নানা কারণে থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বন্ধ হয়ে গেছে। আগে যেখানে এ খাতের পাঁচশ থেকে ছয়শ কোটি টাকার থার্ড পার্টি বিমা হতো। এখন সেটি একশ কোটি হয় কিনা সন্দেহ আছে। আইডিআরএ থার্ড পার্টি বিমা আবারও চালু করার জন্য কাজ করছে। তবে এটি যত দ্রুত করা যায় ততই বিমা সেক্টরের জন্য মঙ্গল হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষের প্রাণহানি ও এর চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়। এ ক্ষেত্রে বিমা হতে পারত আর্থিক রক্ষাকবচ। গাড়ির মালিকের তৃতীয় পক্ষের বিমা সুবিধার আওতায় থাকতে পারত এ মানুষগুলো। কিন্তু সেই সুবিধা দেশে ছিল নামকাওয়াস্তে। এর প্রিমিয়ামও যেমন ছিল ন্যূনতম, তেমনি বিমা দাবির পরিমাণও এতটাই অনুল্লেখযোগ্য যে, ক্ষতিগ্রস্তরা তা দাবিও করত না।
তিনি বলেন, অকার্যকর বিধায় সেই বিমা ব্যবস্থা বাতিলও করা হয়েছে। তবে তা আবার নতুন করে ফিরিয়ে এনে যুগোপযোগী করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।
এবার আগের চেয়েও বেশি প্রিমিয়াম, বেশি ক্ষতিপূরণ ও শক্ত আইনি কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরও করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে নতুন থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্সের প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি করেছে আইডিআরএ।
পুরোনো মোটরযান বিমায় মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বছরে ৩০০ টাকা প্রিমিয়াম থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা বা তার বেশি করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
গাড়ির ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪ গুণ করার কথা বলা হচ্ছে। আগের প্রিমিয়াম ৫০০ টাকার মতো ছিল, যা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
নতুন প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ কয়েক গুণ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিদ্যমান অঙ্কের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ করার বা ৫ লাখ টাকা করার কথা ভাবছে আইডিআরএ। যদিও বিমা কোম্পানিগুলো তা কিছুটা কমাতে চাচ্ছে। তা হতে পারে ৩ থেকে ৪ লাখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন বলেন, বিমা খাতের উন্নয়নের বর্তমান কর্তৃপক্ষ নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে রি-ইনস্যুরেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আমাদের নজরে এসেছে, সেগুলো সময় উপযোগী করার জন্য ও কাজ করছে আইডিআরএ।
সেমিনারে কর্তৃপক্ষের সদস্য দলিল উদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার, স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন সরকার, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কাজিম উদ্দিন, ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের পিপলু বিশ্বাস, জেনিথ ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান এবং আইআরএফসের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি /আইপি