নিজস্ব প্রতিবেদক:
চার খুনের ঘটনায় মাগুরার জগদল এখন আতঙ্কের জনপদ। হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে একের পর এক নারী-পুরুষ গ্রাম ছাড়ছেন । আর পুরুষ লোকের দেখা পাওয়াই এখন কঠিন সেখানে।
আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জগদল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন চার জন। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জগদল গ্রামের শিউলি ও শাবানা বলেন, হামলাকারীরা ধারালো রামদা দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করতে থাকে প্রতিপক্ষকে। অব্যাহত আঘাতে রক্তাত রহমান ও কবির এক পর্যায়ে হামলাকারীদের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানান। কিন্তু হামলাকারীদের পাষান হৃদয়ে সেই আকুতি সামান্যতম রেখাপাত করেনি। হামলাকারীরা লাথি দিয়ে রহমান ও কবিরসহ অনেকেই ফেলে দেয় পার্শ্ববর্তী পুকুরে। এরপর তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার নতুন করে শুরু হয় হামলা। অন্যদিকে রামদার আঘাতে মৃতপ্রায় সবুর মোল্ল্যা পানি পানি বলে কাতরাতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী নারীরা সবুরকে খাওয়ানোর জন্য পানি নিয়ে এগিয়ে আসলে তাদের প্রতি উদ্যত হয়ে উঠে হামলাকারীরা।
নিহত কবিরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে চাঁদনি আক্তার জানান, আমার বাবা মানুষের বিপদ আপদের কথা শুনলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেতেন। চাচাতো ভাইকে মারা হচ্ছে- এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে বাবা ছুটে যান ঘটনাস্থলে তাকে উদ্ধার করতে। এ সময় হামলাকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবার ওপর। তাদের নৃশংসতায় আমার বাবাও খুন হয়েছেন।
নিহত সবুরের ভাই হাবিবুর বলেন, এবার দুর্বৃত্তরা একই সঙ্গে হত্যা করছে আমার আপন দুই ভাইসহ চারজনকে। এর আগেও এই দুবৃর্ত্তরা ২০০৩ সালে আমার আরেক আপন ভাই জরিপ মোল্ল্যাকে হত্যা করে। প্রভাবশালীদের চাপে আমরা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হই। সেদিন জরিপ ভাইয়ের খুনিদের বিচার হলে এখন আরও দুই ভাইকে হারাতাম না। জানি না এবারও ন্যায় বিচার পাব কি না?
এদিকে চার খুনের ঘটনায় চরম আতংক বিরাজ করছে জগদাল গ্রামে। বাড়ির আসবাপত্র ধান, চাল, গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছেন গ্রামের নারী-পুরুষরা। সেখানকার মো. সুমনের স্ত্রী সান্তনাকে দেখা গেল তল্পিতল্পাসহ গ্রাম ছাড়তে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘স্বামীসহ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা শুক্রবারই বাড়ি ছেড়েছেন। আমি মেয়ে মানুষ বাড়িতে একা থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। এছাড়া ফের হামলা ও লুটতরাজের ভয়ে আসবাপত্র চাল-ডাল নিয়ে গ্রাম ছাড়ছি।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাঈমকে দেখা গেল ভ্যানে করে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছাড়তে। সে জানায়, বাবা-মা শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি ছেড়েছেন। সে একাই বাড়িতে অবস্থান করছিল। বাবা কিছুক্ষণ আগে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে চাল-ডাল, আসবাপত্র গবাদি পশুসহ তাকে নানা বাড়িতে যেতে বলেছে। কিন্তু সে ছোট মানুষ, ফলে এত কিছু নিয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই চাল-ডাল, গবাদি পশু ফেলে রেখে শুধু কিছু আসবাপত্র নিয়ে নানা বাড়ি যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর জগদল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে জগদল ৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার নজরুল ইসলাম প্রার্থী হবেন। একই সঙ্গে সৈয়দ হাসানও সেখানে মেম্বার প্রার্থী। এ নিয়েই নজরুল ইসলামে ও সৈয়দ হাসানের সমর্থকদের মধ্যে শুক্রবার বিকেলে সংঘর্ষ বাধে। এতে চার জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। শুধু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকেই গ্রেপ্তার করা হবে।
বিএসডি / আইকে