আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অতিরিক্ত বিস্কুট খেলে কোনো ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। হংকংয়ের একটি নজরদারি সংস্থার গবেষণায় সম্প্রতি এমন তথ্য সামনে এসেছে। সংস্থাটি বিভিন্ন ধরনের ৬০টি বিস্কুট পরীক্ষা করে গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএন।
হংকংয়ে হওয়া নতুন ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, চায়ের সঙ্গে বা টিফিনে বা ক্ষুধা পেলে অনেকে বিস্কুট খেতে উপভোগ করলেও মুখরোচক এই খাবারটি বেশি পরিমাণে খেলে বেড়ে যায় ক্যান্সারের সম্ভাবনা। ৬০টি ভিন্ন ধরনের বিস্কুটের ওপর গবেষণা করার পর হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, যে বিস্কুটগুলোর ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে সেগুলো আগে থেকেই প্যাক করা ছিল। গ্লাইসিডল এবং অ্যাক্রিলামাইড নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে ওইসব প্যাকেটজাত বিস্কুটের মধ্যে। এই দু’টি রাসায়নিক উপাদানই কার্সিনোজেন ও ক্যান্সারকে প্ররোচিত করে।
অবশ্য বিস্কুট উৎপাদনকারীদের এই দু’টি রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তবে অবশ্যই এই রাসায়নিক যৌগ ব্যবহারের একটি সীমা রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ব্রেঞ্চমার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিস্কুট তৈরির জন্য অ্যাক্রিলামাইডের পরিমাণ ৩৫০ গ্রামের মধ্যে হওয়া উচিত। অর্থাৎ এক কেজি বিস্কুট তৈরি করার ক্ষেত্রে ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
তবে গবেষণায় উঠে এসেছে অন্য তথ্য। হংকংয়ের বিস্কুট উৎপাদনকারী ৪টি সংস্থা অতিক্রম করে গেছে এই অ্যাক্রিলামাইডের মাত্রা। অর্থাৎ ওই চারটি সংস্থা এক কেজি বিস্কুট তৈরি করতে ৩৫০ গ্রামের বেশি অ্যাক্রিলামাইড ব্যবহার করেছে, যা শরীরে বাড়িয়ে তুলছে ক্যান্সারের ঝুঁকি।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মুজির স্যান্ডউইচ ক্র্যাকার নামক একটি বিস্কুট ব্র্যান্ডে ৬২০ গ্রাম অ্যাক্রিলামাইড পাওয়া গেছে, যা নির্ধারিত সীমার প্রায় দ্বিগুণ। কার্সিনোজেনিক বিস্কুটের মধ্যে ওরিও, মারি এবং প্রেটজ ওয়েফারের মধ্যেও অ্যাক্রিলামাইড বাড়তি মাত্রায় পাওয়া গেছে।
শুধু ক্যান্সারের যৌগ নয়, ৬০টির মধ্যে ৫৬টি বিস্কুটের মধ্যে পাওয়া গেছে ৩এমসিপিডি নামক একটি রাসায়নিক যৌগ, যা কিডনিসহ পুরুষদের প্রজনন অঙ্গগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যে ব্যক্তির ওজন ৬০ কেজি, তার একদিনে ১২০ গ্রামের বেশি এই যৌগ গ্রহণ করা উচিত নয়। সেখানে এক কেজি বিস্কুটের মধ্যে পাওয়া গেছে ২ হাজার গ্রাম ৩এমসিপিডি।
এখানেই শেষ নয়। কমপক্ষে ৩৩টি বিস্কুটের নুমনার মধ্যে উচ্চ ফ্যাট, ২৭টি নমুনায় উচ্চ সোডিয়াম এবং ১৩টির মধ্যে চিনির পরিমাণ বেশি ছিল। এছাড়া ৪০ শতাংশ বিস্কুটে বিভ্রান্তিকর পুষ্টির তথ্য লেখা ছিল।
যদিও এই ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম নয়, এর আগে সুইডেনে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ৬০ হাজার নারীর মধ্যে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। যেখানে নারীরা সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার বিস্কুট খেয়েছিলেন তাদের গর্ভের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৩৩ শতাংশ বেশি ছিল। যেসব নারী সপ্তাহে তিনবারের বেশি বিস্কুট খেয়েছিলেন তাদের টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেশি ছিল।
সর্বশেষ এই গবেষণাটি হংকংয়ে হলেও এর ফলাফল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। অবশ্য ২০১৭ সালে ভারতে বিস্কুটের ওপর গবেষণা করা হয়। ওই গবেষণায়ও বিস্কুটে ফ্যাট ও চিনির পরিমাণ বেশি শনাক্ত হয়। এক কেজি বিস্কুটে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম চিনি এবং ২০ গ্রাম ফ্যাট পাওয়া গিয়েছিল সেই গবেষণায়। একইসঙ্গে বিস্কুটের মধ্যে লবণ রয়েছে অত্যধিক পরিমাণে, যা হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে।