নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার দুই অনুসারী অস্ত্র হাতে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া ও গুলি করছেন—এমন একটি ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল (ছড়িয়ে পড়া) হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাতে পেয়েছে। তবে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ অস্ত্রধারী দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রধারী ওই দুই ব্যক্তি হলেন সহিদ উল্যাহ ওরফে কেচ্ছা রাশেল (২৫) ও আনোয়ার হোসেন ওরফে পিচ্ছি মাসুদ (২৮)। দুজনই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে ১০টির বেশি করে মামলা রয়েছে।
কেচ্ছা রাশেল, পিচ্ছি মাসুদসহ সাত থেকে আটজনের একটি দল ১৩ মে বিকেল পাঁচটার দিকে অতর্কিতে বসুরহাট পৌরসভার করালিয়া এলাকার একটি দোকানে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছিল। হামলাকারীরা সেখানে অবস্থানরত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের (বাদল) অনুসারীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়েছিল। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রটি ওই ঘটনার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পিচ্ছি মাসুদ গুলির পর একপর্যায়ে হাতে থাকা পিস্তল কোমরে লুকিয়ে রাখেন। তবে কেচ্ছা রাশেল গুলির পরও কিছুক্ষণ সেখানে অস্ত্র হাতে ঘোরাঘুরি করেন। দু-তিন মিনিটের ওই হামলা-গুলির ঘটনায় মিজানুর রহমানের পাঁচজন অনুসারী আহত হয়েছিলেন। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি গুলির কার্তুজ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কাদের মির্জার মুঠোফোন নম্বরে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও নম্বরটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘মেয়র সাহেব অসুস্থ, ঘুমাচ্ছেন।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক বলেন, হামলার ঘটনার দিনই থানায় মামলা হয়েছে। তবে হামলায় অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি হালকাভাবে এসেছিল। এখন গুলির ভিডিওচিত্রটি তাঁরা হাতে পাওয়ায় তদন্তে গতি আসবে।
গত বছরের ৩১ মার্চ পৌরসভার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, নোয়াখালী ও ফেনীর দুই সাংসদের অপরাজনীতি, টেন্ডার ও চাকরি–বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য রেখে আলোচনায় আসেন আবদুল কাদের মির্জা। এরপর তিনি বিভিন্ন নির্বাচনী সভা-সমাবেশে নোয়াখালী ও ফেনীর দুই সাংসদ ছাড়াও দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের লালনসহ নানা অভিযোগ করতে থাকেন।
এর ভেতরেই গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কাদের মির্জার অনুসারীদের সঙ্গে প্রতিপক্ষের মিজানুর রহমানের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয় চাপরাশিরহাট বাজারে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন (মুজাক্কির)। এরপর ৮ মার্চ কাদের মির্জার নেতৃত্বে অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। ৯ মার্চ এ ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা হয়। এর জের ধরে রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বসুরহাটে মারা যান সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আলাউদ্দিন।
উভয় হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযোগের তির কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। তবে বরাবরই দাবি করে আসছেন, তিনি অস্ত্রের রাজনীতি করেন না। প্রতিপক্ষই তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে অস্ত্রধারীদের ভাড়া করেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, কাদের মির্জা নিজেই যে অপরাজনীতির হোতা ও সন্ত্রাসী লালনকারী, এই হামলার ঘটনার ভিডিওচিত্র তার বড় প্রমাণ। কারণ, এই অস্ত্রধারীরা সার্বক্ষণিক কাদের মির্জার সঙ্গে থাকেন।