ধর্ম ডেস্ক:
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের পর অন্যতম ফরজ হলো- হালাল উপার্জন। হালাল উপার্জন ছাড়া ইবাদত-বন্দেগি কবুল হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ে মানুষ হালাল উপার্জনের বিষয়ে সচেতন ও সজাগ নন। দুনিয়ার লোভে-মোহে মানুষ ধন-সম্পদের পেছনে পাগলের মতো ছুটছে। সম্পদ অর্জনের নেশায় হালাল-হারাম বিবেচনা না করে, সামনে যা পাচ্ছে- তাই হাত ভরে জমা করছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ আল্লাহকে ভুলে হারামে আরাম খুঁজছে। হারাম পথকেই সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্যতম সোপান মনে করছে।
বাস্তবতা হলো, হারামে কোনো আরাম নেই। হালাল উপার্জনে আল্লাহ যে বরকত দিয়েছেন, হারামে তা নেই। সুতরাং গভীরভাবে চিন্তা করলে পরিলক্ষিত হয়, হারাম উপার্জনকারীর চেয়ে হালাল উপার্জনকারী বেশি সুখে ও শান্তিতে বসবাস করেন। হারাম উপার্জনকারীর একের পর এক বিপদ লেগেই থাকে।
এই সমাজে এমন অনেক লোক আছে, যারা নিয়মিত নামাজ পরে আবার হারাম খায়। হজ পালন করে আবার সুদ খায়। মসজিদে নামাজে যাওয়ার সময় হারাম খেয়ে নামাজে যায়। এমনকি গায়ের পোষাকটিও হারাম টাকার। নামাজ শেষে লম্বা লম্বা মোনাজাত করে, দান-খয়রাতও করে। কিন্তু দোয়া কবুল হয় না, বিপদ পিছু ছাড়ে না, পরিবারে শান্তি নেই কিংবা সন্তান বখে গেছে। বস্তুত হারাম ভক্ষণ করে বালা-মসিবত দূর হওয়ার আশা করা, সংসারে সুখ-শান্তির প্রত্যাশা করা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ করো, তার ইবাদত করো এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। তারই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ -সুরা আনকাবুত : ১৭
কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ -সুরা জুমা : ১০
ইসলাম নিজ হাতে হালালপন্থায় উপার্জনকে গুরুত্ব দেয়। নিজ হাতে হালাল উপার্জন করা সব নবীদের সুন্নত। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কাজ করে উপার্জন করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল জীবিকা উপার্জন ও তা গ্রহণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘ইসলামে মৌলিক ইবাদতগুলো কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো- হালাল রুজি। যার রুজি হালাল নয়, তার সব ধরনের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সবকিছুই বরবাদ হয়ে যাবে। কিছুই কবুল হবে না।’
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘দুই হাতের উপার্জিত হালাল খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য আর কিছুই নেই।’ –সহিহ বোখারি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রুজি দিয়ে সে নিজে ও তার পরিবার-পরিজন প্রতিপালনের চেষ্টা করে, সে আল্লাহর পথে মুজাহিদের মতো।’
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হারাম ভক্ষণকারীর শরীর কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি হারাম ভক্ষণ করে দিনরাত নামাজ পরে তারপরও তার এক রাকাত নামাজ আল্লাহর দরবারে পৌঁছবে না অর্থাৎ তার নামাজ কবুল হবে না।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জন করো। কেননা কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও কিছু বিলম্ব ঘটে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎভাবে জীবিক অর্জন করো। যা হালাল তাই গ্রহণ করো এবং যা হারাম তা বর্জন করো।’ -ইবনে মাজাহ
হজরত আবু ইয়ালার বর্ণনায় হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোকেরা! সম্পদের প্রাচুর্যতাই ধনী নয় বরং আসল ধনী হচ্ছে- মনের ঐশ্বর্য। আর আল্লাহ তার বান্দাকে তাই দেবেন যা তিনি তার রিজিকে রেখেছেন। সুতরাং সৎভাবে উপার্জন করো। যা হালাল করা হয়েছে তা গ্রহণ করো এবং যা হারাম করা হয়েছে তা বর্জন করো।’
হারাম উপার্জনকারী কখনও জান্নাতে যাবে না এবং সে কখনও পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরাই জান্নাতের প্রথম কাতারে থাকবে। অর্থাৎ তারাই সবার আগে জান্নাতে যাবে।’
বিএসডি / আইকে