নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান (৪৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আরিফুল ইসলাম বাবু (২৫) নামে এক যুবকসহ চারজনকে আটক করেছে। তবে আটক অন্যান্যদের নাম পুলিশ জানায়নি।
বুধবার (২৭অক্টোবর) সকালে কাপ্তাই ইউনিয়নের সুইডিশ কলোনি এলাকায় পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে।
মঙ্গলবার (২৬অক্টোবর) দিনগত রাতে নতুনবাজার এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় আহতরা হলেন- কাপ্তাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকতার আলম, আওয়ামীলীগের কর্মী আব্দুল জলিল, আব্দুল মান্নান, উপজেলা যুবলীগের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদ উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম নুর উদ্দীন সুমন, ছাত্রলীগ নেতা জহির, সোহেল, আরমান, ইসমাইল, রিয়াদ, পারভেজ এবং কাপ্তাই ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আ.লীগের সমর্থন বঞ্চিত স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মহিউদ্দীন পাটোয়ারী বাদল গ্রুপের সমর্থক সালাউদ্দীন, আলাউদ্দীন, মা বেকারির মালিক মোশারফ ও আমির নামের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে আব্দুল জলিল নামের এক ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা দিতে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যান্যরা উপজেলা সদর হাসপাতাল এবং স্থানীয় ফার্মেসিগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে ইউপি সদস্য নিহতের ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশ দোকান-পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাপ্তাই ইউনিয়ন আ.লীগের নেতৃত্বে উক্ত স্থানে প্রতিবাদ সভা এবং কালোব্যাচ ধারণ করেছে দলটির নেতৃরা। উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে ৫প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ওই এলাকায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
ঘটনার ১৭ঘন্টা পার হওয়ার পরও এখনো থানায় মামলা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে ইউপি সদস্যর মরদেহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে এনে ময়না তদন্ত শেষে করে বিকেলে কাপ্তাই উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিকেলে ইউপি সদস্যর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাযা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান একই ইউনিয়নে আ.লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সজিব মেম্বারের সঙ্গে কারো বাকবিতণ্ডা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে তিনি মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে আকতার নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আলাপ করছিলেন। ওই মুহূর্তে কাপ্তাই ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আ.লীগের সমর্থন বঞ্চিত স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মহিউদ্দীন পাটোয়ারী বাদল গ্রুপের সমর্থকরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সজিবের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল বলেন, ইউপি সদস্য সজিবসহ ২০ জনের একটি গ্রুপ মঙ্গলবার রাতে মা বেকারিতে এসে আমার সমর্থিত কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এ নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। মূলত সজিবরা গায়ে পড়েই তাদের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন বলে তিনি অভিযোগ তোলেন।
এদিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান এবং পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তারা।
কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দীন বলেন, থানায় এখনও মামলা দায়ের হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ.লীগের সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ এবং আ.লীগের সমর্থন বঞ্চিত একই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মহিউদ্দিন পাটোয়ারী বাদল গ্রুপের সমর্থকরা নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়লে ওই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান প্রতিপক্ষের হামলায় ঘটনাস্থলে মারা যান।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর দিনগত রাতে একদল সন্ত্রাসী কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়ন আ.লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেথোয়াই মারমা-কে (৬০) আগাপাড়া এলাকায় তার নিজ বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আ.লীগ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র দলকে দায়ী করছে।
বিএসডি / আইকে