২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচের পর মূল পর্বে পরের পাঁচ আসরে কোনো ম্যাচই জেতেনি বাংলাদেশ।
দিনের পর দিন ব্যর্থতার বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্রিকেটাররা। অনেক সময় সুযোগ তৈরি করেন। অনেক সময় জয়ের খুব কাছেও চলে যান। কিন্তু হাতের মুঠোয় সোনার হরিণ ধরা দেয় না। বেঙ্গালুরুতে ভারতকে মাত্র ১ রানের হারাতে পারেনি। সুযোগ তৈরি করেছিল শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তানের বিপক্ষে। ঢাকায় লড়াই করেছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। কোনোবারই জিততে পারেন না বাংলাদেশ। এবার তেমন কিছুই হলো শারজায়।
সীমানায় লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচের পর ম্যাচের এপিটাফ লিখা হয়ে যায়। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল। সারাবিশ্বে টি-টোয়েন্টি ফেরি করে বেড়ানো আন্দ্রে রাসেল জানতেন কিভাবে ম্যাচ জিততে হয়। তাইতো ৬ বলের ৬টিই করলেন ফুলার লেন্থ। কোনো বাউন্ডারি না পাওয়ায় ম্যাচটা আর জেতা হয়নি বাংলাদেশের। ৩ রানের আক্ষেপে নিভে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের প্রদ্বীপ।
এর আগে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতলে সেমিফাইনালের আশা টিকে থাকত। পরের দুই ম্যাচেও জিততে হতো দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ব্যর্থতার গেরো না ছুটানোয় সবশেষ বাংলাদেশের!
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে চমক। লিটনকে টপকে সাকিব প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে। তবে হাসেনি তার ব্যাট। রাসেলের বলে এলোমেলো শট খেলে আউট ৯ রানে। তিনে নামা লিটন শুরুতে স্বাচ্ছন্দ্যে না খেললেও থিতু হয়ে রান করা শুরু করেন। নাঈমের ব্যাটও হাসেনি। হোল্ডারের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটে টেনে এনে ১৭ রানে বোল্ড হন।
দলে ফেরা সৌম্য ও লিটন হাল ধরেছিলেন। ৩১ রানের জুটি গড়েন তারা। সৌম্য ইনিংস বড় করার আশা দেখালেও পারেননি। আকিল হোসেনের বল উইকেট থেকে সরে খেলতে গিয়ে মিসটাইমিংয়ে গেইলের হাতে ক্যাচ দেন ১৭ রানে। মুশফিকুর রহিম ক্রিজে আসলেন আর গেলেন! আউট হলেন বাজেভাবে। রবি রামপলের বল কাট করে চার মারার এক বল পর স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড।
কঠিন পরিস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহর দুই ছক্কা, লিটনের স্কুপ ও কাট করে চার স্বস্তি আনলেও প্রয়োজন মেটাতে পারছিল না। তাতে যা হবার তাই হলো। বল ও রানের ব্যবধান বড় হতে থাকে। ১৯তম ওভারে লিটনকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
তখন ৭ বলে ১৩ রান লাগত বাংলাদেশের। ব্রাভোর করা ওভারের শেষ বলে ক্রিজের অনেক ভেতরে গিয়ে লং অন দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সীমানার অত্যন্ত প্রহরী হোল্ডারকে ফাঁকি দিতে পারেননি। হোল্ডার এমনিতেই লম্বা। উচ্চতাকে আরো কাজে লাগাতে দিয়েছিলেন লাফ। তাতে বল জমে যায় হাতের মুঠোয়। ওখানেই শেষ হয় লিটনের অনেক সংগ্রামের ৪৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। শেষ ওভারে আফিফকে সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ হাহাকরই বাড়িয়েছেন।
বোলাররা শুরুতেই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। গেইল, রাসেল, লুইস, পোলার্ডদের ১৪২ রানে আটকে রাখার কাজটা সহজ ছিল না। তবে শেষ ওভারে মোস্তাফিজের ১৯ রান পার্থক্য তৈরি করে।
এছাড়া ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া নিকোলাস পুরানকে ১ রানে স্ট্যাম্পিংয়ে জীবন দেওয়া এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করা রোস্টন চেজের ক্যাচ দুবার ছেড়ে দেওয়া কাল হলো বাংলাদেশের।
গেইল, পোলার্ড, রাসেলদের নিষ্প্রভ দিনে পুরান ২০ বলে করলেন ৪০ রান। ছোট্ট এই ক্যামিও উত্তর ছিল না বাংলাদেশের কাছে। শেষ দুই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য শুধুমাত্র নিয়মরক্ষারই হয়ে রইল।
বিএসডি/এসএসএ