সম্প্রতি শূন্য হওয়া তিন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় অর্ধশত। প্রতিটি আসনেই হাল ধরতে চান প্রয়াত সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা। সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী কুমিল্লা-৫ আসনে। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও ভাইসহ ২৬ জন নৌকার মাঝি হতে চান।
সংবিধান অনুযায়ী শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট আসনের তফসিল ঘোষণা করবে। এরপর শুরু হবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। তবে, তফসিল ঘোষণার আগে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সে বিষয়ে মুখ খুলতে চান না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা।
কুমিল্লা-৫ আসন
গত ১৪ এপ্রিল মারা যান সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তার মৃত্যুতে শূন্য হয় কুমিল্লা-৫ আসন। এ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হওয়া আবদুল মতিন খসরুর পরিবারের চার সদস্য মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন- স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু, ছেলে মুনেফ ওয়াসিফ, মেয়ে ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন এবং ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস।
এছাড়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, সহ-সভাপতি লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মো. আল আমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন- অধ্যক্ষ মো. আলী চৌধুরী মানিক, মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুস সালাম বেগ, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজালাল মজুমদার, তারিক হায়দার, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, বিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, আব্দুল জলিল, আবু জাহের, শাহজালাল মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহতাব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম।
দিদার মো. নিজামুল ইসলাম বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার বাবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের রাজনীতি করি। এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সুযোগ পেলে আরও বেশি মানুষের সেবা করতে চাই।
ঢাকা-১৪ আসন
গত ৪ এপ্রিল সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৪ আসন। রাজধানীর বুকে শূন্য হওয়া আসনটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে নানামুখী আলোচনা। এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হকসহ নয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা মাঠে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য এবং এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন। এজন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে থাকলেও আওয়াজ দিচ্ছেন না অনেকে। ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী, দারুস সালাম ও রূপনগর থানার আংশিক নিয়ে গঠিত এ আসন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তবে আসনটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
মনোনয়ন চাইবেন কি না— জানতে চাইলে এস এম মান্নান কচি বলেন, নির্বাচন করার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। ছোটবেলা থেকে এ এলাকায় বেড়ে উঠেছি। রাজনীতি করছি। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হোক। আমাদের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তা মেনে নেব।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনও। দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। ঢাকা পোস্টকে সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, আমি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে আছি। আমার বিশ্বাস, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্টার শেয়ার করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি সেখানে লেখেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন, আমার এলাকার মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।’
শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। অতিমারি পরিস্থিতিতে মিরপুরের অসহায়, প্রতিবন্ধীদের মাঝে ত্রাণ ও ঈদ উপহার বিতরণ করছেন তিনি। পাশাপাশি মিরপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতীতের মতো সক্রিয় তিনি।
আসনটিতে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, এ বি এম মাজহারুল আনাম, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী।
সিলেট-৩ আসন
গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকার আপামর জনতার সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। জীবদ্দশায় জীবনসঙ্গী হিসেবে তার সব কর্মকাণ্ডে অতীতে যেমন পাশে ছিলাম, আগামী দিনেও একইভাবে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জবাসীর কাছে থাকতে আগ্রহী। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও আশীর্বাদ পেলে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপির অসমাপ্ত উন্নয়নকাজগুলো সম্পন্ন করতে আমি আগামী দিনে সিলেট-৩ নির্বাচনী এলাকার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রাখতে চাই।
এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরও আছেন- আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কবে শিডিউল ঘোষণা করে সেই অপেক্ষায় আছি আমরা। শূন্য হওয়া আসনগুলোতে আমাদের অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। তারা মনোনয়ন চাইবেন। বিষয়টি মনোনয়ন বোর্ড দেখবে। দলের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগী প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’