নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে আরো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে অন্তত ১১ জন।
আগের দিন শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলা এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলায় আহত হয়েছে অন্তত ১২ জন। শেরপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচার চলাকালে দুই কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। শিবগঞ্জে হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আহত হয়েছে পাঁচজন। পটুয়াখালী সদরেও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাঁর কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আহত হয়েছে প্রার্থীসহ পাঁচজন।
শুক্রবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত দেশের ছয়টি স্থানে হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় আহত হয় ৪৩ জন। বেশির ভাগ স্থানে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন।
গতকাল গাজীপুরের কাপাসিয়ার চাঁদপুর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। খোরশেদ আলম (৪০) নামের ওই সাংবাদিককে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খোরশেদ অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তাঁর ভিডিও ক্যামেরা, দুটি মোবাইল ফোনসেট ও চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে আগামী ১১ নভেম্বর। এরই মধ্যে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। এর আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে নিহত হয়েছে আটজন।
নগরকান্দার তালমা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রণজিৎ মণ্ডল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ভাঙ্গা কে এম কলেজের সাবেক শিক্ষক। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল হোসেন মিয়া। তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী কামালের একটি নির্বাচনী কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয়েই গতকাল কামালের সঙ্গে সমর্থকদের মতবিনিময় সভাকালে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কামাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘আমরা রসুলপুর বাজারের নির্বাচনী ক্যাম্পে ছিলাম। তাঁরা মিছিল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেছেন। পুলিশ উপস্থিত ছিল। তবে পুলিশ ঠেকাইয়া সারতে পারে নাই। আমাদের ৮-১০ জন মানুষকে হাত-পা ভাইঙ্গা দিছে।’
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনূর রহমান বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর মতবিনিময়সভায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মিছিল থেকে হামলার চেষ্টা করা হয়। তবে পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের শুভগাছা গ্রামে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে শুক্রবার রাতে গণসংযোগে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মোমিন মহসিন। সেখানে পথসভা করে রাত ১০টার দিকে ফেরার পথে খামারকান্দি গ্রামে তাঁর বহরে হামলা চালানো হয়। ছুরিকাঘাত করা হয় তাঁর কর্মী পারভবানীপুর গ্রামের মো. সাগর হোসেন ও ঝাজর গ্রামের জহুরুল ইসলামকে। ভাঙচুর করা হয় একটি মোটরসাইকেল ও হ্যান্ড মাইক। আহত দুজন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল শনিবার মহসিন শেরপুর থানায় অভিযোগ করেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাবের কর্মী-সমর্থকরা এই হামলা চালিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমূল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোজাফ্ফর হোসেনের ওপর হামলায় তিনিসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। আটমূল বাজারে গণসংযোগ চালানোর সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
মোজাফ্ফর হোসেন হামলার জন্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি বেলাল হোসেনকে দায়ী করেছেন। তবে বেলালের দাবি, তাঁর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
শিবগঞ্জ থানা ওসি সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নে হামলার শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জুয়েল মৃধা ও তাঁর লোকজন। এতে আহত পাঁচজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ, কবির তালুকদার ও তাঁর ২৫ থেকে ৩০ জন সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
সুজানগরে অস্ত্র উদ্ধার : আসন্ন ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে পাবনার সুজানগর উপজেলার রানীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ছিল শুক্রবার রাতে। রানীনগর বাজারে দলের কার্যালয়ে এ সভায় যোগ দিতে আসেন উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন। তাঁর সঙ্গে কয়েকটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে তাঁর লোকজন আসে। ওই বহরের একটি মাইক্রোবাস থেকে একটি শ্যুটার গান ও একটি শট গান জব্দ করে পুলিশ। আটক করা হয় গাড়ির চালক মো. হাবিবুল্লাহকে।
পাবনার আমিনপুর থানার ওসি রওশন আলী জানান, লাইসেন্স করা শ্যুটার গানটি সুজানগর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জায়েদুল হক জনির বাবা পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জল হোসেন তোফার।
গাড়ির মালিক উজ্জল দাবি করেন, কাউন্সিলর জায়েদুল হক জনি দুটি অস্ত্রসহ কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে গাড়িতে উঠেছিলেন।
সুজানগর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হাবিবুল্লাহসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কাউন্সিলর জনি যদি তাঁর বাবার অস্ত্র নিয়ে আসেন, তাহলে তাঁকেও অভিযুক্ত করা হবে।
বিএসডি /আইপি