নিজস্ব প্রতিনিধি:
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা ও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ‘পলাতক’ বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বগুড়ার আব্দুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকার বিরুদ্ধে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে ।
প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রোববার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রাখে।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন মামলাটির শুনানি করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আবুল হাসান।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আব্দুল মোমিন তালুকদার। তিনি বগুড়া-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
যুদ্ধাপরাধের তিন অভিযোগ মোমিনের বিরুদ্ধে
>> ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে আসামি আব্দুল মোমিন তালুকদারসহ ৫ থেকে ৬ জন স্বাধীনতাবিরোধী ও ২০ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্যকে নিয়ে বগুড়া জেলার আদমদিঘী থানার কলসা বাজার, রথবাড়ী এবং তিয়রপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা করতে অপারেশন চালান। ওই দিন আসামি নিজে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কলসা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলাম উদ্দিন প্রামানিকসহ হিন্দু-মুসলিম মিলিয়ে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করেন।
>> ১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে একই থানার কাশিমালা গ্রামের ১৬ থেকে ১৭টি বাড়ি লুট করেন মোমিন। সেদিন ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে হত্যা করা হয়।
>> ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে আব্দুল মোমিন তালুকদার রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ে আদমদিঘী থানার তালশন গ্রামের অভিযান চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে জানিয়ে বলে রেজিয়া সুলতানা চমন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
“উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রোববার মামলাটির রায়ের জন্য রাখা হয়েছে, যে কোনো দিন রায় দেবে ট্রাইব্যুনাল।”
তবে মামলাটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে রায়ে মোমিন খালাস পাবেন বলে আশাবাদের কথা শোনান তার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হাসান।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে দালাল আইনের মামলায় মোমিনকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন তার বাবা আব্দুল মজিদ এবং ভাই আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মতিন।
“কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বাবা ও ভাইদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায়।”
২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে এ মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা জেডএম আলতাফুর রহমান।
এ মামলায় জব্দ তালিকা ছাড়াও ২৯ জনকে ঘটনার স্বাক্ষী করা হয়। বিচারের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে আবদুল মোমিন তালুকদার বিএনপিতে যোগ দেন। পরে আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পান তিনি।
তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালে দুইবার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
বিএসডি / আইকে