আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কাবুলের নতুন ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের শাসকদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জড়ো হয়েছেন আফগানিস্তানের প্রতিবেশি দেশগুলোর কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বুধবার দিল্লিতে আফগান ইস্যুতে আঞ্চলিক সংলাপ শুরু হলেও তাতে অংশ নেয়নি ভারতের চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী চীন এবং পাকিস্তান।
কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের তিন মাসের কম সময় পর আফগানিস্তান ইস্যুতে দিল্লিতে দু’দিনের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংলাপ ডেকেছে ভারত। এই সংলাপে অংশ নিয়েছেন ভারত, ইরান, রাশিয়া,কাজাখ্তান, কিরগজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের প্রতিনিধিরা।
ভারত সরকারের শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেছেন, ‘আমরা সবাই দেশটির পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সেই পরিস্থিতি শুধুমাত্র আফগানিস্তানের জনগণের জন্যই নয়, বরং প্রতিবেশীদের এবং এই অঞ্চলেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।’
আফগানিস্তানে গত আগস্টে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের আত্মসমর্পণের পর দেশটিতে নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধার করেছে পাকিস্তান। পশ্চিমা সহায়তা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রত্যাশা করছে তালেবান। এ দুই দেশই আফগান ইস্যুতে ভারতের আঞ্চলিক সংলাপে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে।
সূচি না মেলায় চীন এই সংলাপে অংশ নেয়নি বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ভারতের ডাকা সংলাপ বর্জন করেছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মোঈদ ইউসুফ ভারতকে এই অঞ্চলের ‘ভক্ষক’ বলে মন্তব্য করেন।
গত মাসে প্রথমবারের মতো তালেবানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাতারে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ভারত। আফগানিস্তানের নতুন শাসকদের সঙ্গে ভারতের ওই বৈঠকে বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে কাজ করেছেন এমন স্বাধীন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক ভারতীয় কূটনীতিকরা বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ও চীনের প্রভাব মোকাবিলায় তালেবানের সাথে কাজ করা প্রয়োজন। তবে নয়াদিল্লিতে এই সংলাপে তালেবানের প্রতিনিধিদের ভারত আমন্ত্রণ জানিয়েছে কি-না তা পরিষ্কার নয়।
এদিকে, বুধবার তিনদিনের সফরে পাকিস্তান গেছেন আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। কাবুলে তালেবানের একজন মুখপাত্র ইসলামাবাদ, মস্কো, তেহরান এবং নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে আশাপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব বৈঠক এই অঞ্চলে আফগানিস্তানের গুরুত্ব তুলে ধরছে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘আমরা আশাবাদী, কারণ পুরো অঞ্চলের জন্য আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন… যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেগুলো বোঝার পথ প্রশস্ত করবে এবং আশা করছি, তারা আফগানিস্তানের উপকারে আসবেন।
গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতাসংস্থা আফগানিস্তানকে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দারিদ্র এবং ক্ষুধা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার আফগান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
সূত্র: রয়টার্স।