করোনার প্রকৃত উৎস সম্পর্কে একটি যথাযথ প্রতিবেদন জমা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে— এই প্রতিবেদন জমা দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস কোনো আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়েছে, না কি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে— এই প্রশ্নের মিমাংসা এখনও হয়নি; এবং এর জন্যই এই ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রয়োজন।
পরে এক বার্তায় জো বাইডেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের উদ্ভব সম্পর্কে দুইটি তত্ত্ব বর্তমানে প্রচলিত। কিন্তু এই দুই তত্ত্বের মধ্যে কোনটি সঠিক তা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি।’
‘আমি এখন গোয়েন্দাদেরকে দ্বিগুন চেষ্টা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের অনুরোধ জানাচ্ছি, যার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছনো যায় এবং এ ব্যাপারে ৯০ দিনের মধ্যে আমাকে প্রতিবেদন দিন।’
এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলের সহযোগিতা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিতে পারে উল্লেখ করে বার্তায় বাইডেন বলেন, ‘আমরা একটি পরিপূর্ণ, স্বচ্ছ, ও তথ্যপ্রমাণভিত্তিক তদন্ত প্রতিবেদন চাই, যেখানে এই ভাইরাস ও ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও উপাত্ত থাকবে।’
এর আগে মঙ্গলবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে করোনার উৎস নিয়ে নতুন করে আরও নিবিড় এবং ‘স্বচ্ছ’ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী জেভিয়ের বেসেরা।
ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘করোনা শুধু আমাদের জীবন থেকে একটি বছরই কেড়ে নেয়নি, বরং এই মারণ ভাইরাসটির কারণে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে বহু লক্ষ মানুষের।’
‘ভাইরাসটির উৎস অনুসন্ধান বিষয়ক গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কারণে আমাদের প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ, বিজ্ঞাণভিত্তিক এবং নিরপেক্ষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন যেখানে এর উদ্ভব ও মহামারি শুরুর দিকে এর ছড়িয়ে পড়া বিষয়ক যাবতীয় তথ্য থাকবে।’
বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ চিকিৎসা উপদেষ্টা ডা. অ্যান্টনি ফাউসি এর আগে যদিও বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন, আক্রান্ত কোনো প্রাণীর দেহ থেকেই মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে করোনাভাইরাস; তবে চলতি মাসে নিজের পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসে ফাউসি জানান, এই ভাইরাসটির উদ্ভব প্রাকৃতিকভাবেই হয়েছে কি না সে বিষয়ে আর নিশ্চিত নন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, চীনের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির তিন গবেষক এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর চীন প্রথম সেখানে কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার খবর বিশ্বকে জানায়।
এবছরের শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে চীনে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল গেলেও বিষয়টির কোনও সুরাহা হয়নি। তদন্তকাজ এবং তদন্ত প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও গভীরতায় ঘাটতি আছে বলে সমালোচনা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই বিশ্বাস করে না যে, করোনাভাইরাস প্রাণী না গবেষণাগার থেকে এসেছে – এ দুটোর মধ্যে কোনটি ঘটার সম্ভাবনা বেশি তা বিশ্লেষণ করে দেখার মতো যথেষ্ট তথ্য তাদের হাতে আছে।
বিষয়টি আরও ভালভাবে তদন্ত করে দেখতে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গবেষণাগারগুলোকেও নির্দেশ দিয়েছেন বাইডেন। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানের আন্তর্জাতিক তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য চীনকেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।