আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনের সঙ্গে বৈঠকের এক সপ্তাহ না পেরোতেই তাইওয়ানের সঙ্গে বৈঠকে বসছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী সোমবার (২২ নভেম্বর) তাইওয়ানের সঙ্গে অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ফার্নান্দেজ ও তাইওয়ানের সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হবে এই আলোচনা।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব তাইওয়ান (এটিআই) এবং তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসের (টিইসিআরও) পৃষ্ঠপোষকতায় এই বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জনগণের সঙ্গে জনগণের বন্ধন, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধই আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ভিত্তি।’
গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) ভার্চুয়াল মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য, জলবায়ু, জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি, তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে।
এসব ইস্যুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্ষকাতর ইস্যু ছিল তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রাম, যাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা’ বলে উল্লেখ করে আসছে চীন এবং অভিযোগ করে আসছে- যুক্তরাষ্ট্র নানা কৌশলে এই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে’ মদত দিচ্ছে।
বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেন, তাইওয়ানের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে’ মদত দেওয়া ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করার মতো ব্যপাার এবং এটি অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাত পুড়বে’।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তাইওয়ানের সঙ্গে যে যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তি রয়েছে, তা-ই মেনে চলতে ইচ্ছুক তার দেশ। তার বাইরে অন্য কোনো কিছুতে জড়ানোর আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় তাইওয়ানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এক সময়ের স্বাধীন রাষ্ট্র তাইওয়ান আসলে পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। প্রায় ৫ দশক ধরে এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে আসা চীন গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বার বার তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শি জিনপিং বলেছেন, চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এই পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবেই অর্জিত হওয়া উচিত, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের ক্ষেত্রে চীনের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে বলেও সতর্ক করেছেন।
এমনকি, তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ফের যুক্ত করতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং।
চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে চার দিনে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা সীমানার মধ্যে প্রায় ১৫০টি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল চীন। তারপর থেকেই অঞ্চলটিতে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে, চীনের কবল থেকে তাইওয়ানকে রক্ষার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘কৌশলগত প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। এ কারণেই তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ‘তাইওয়ান রিলেশন অ্যাক্ট’ নামে একটি চুক্তি অনুসারে দ্বীপটির কাছে অস্ত্র বিক্রিসহ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিএসডি/এসএসএ