আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের সংস্থা আসিয়ানের নেতাদের সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে বেইজিং তার ছোট আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের হয়রানি করবে না। সোমবার আসিয়ানের সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেছেন বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আঞ্চলিক মালিকানার দাবি নিয়ে সংঘাত চলছে এবং এই সংঘাতে ওয়াশিংটন থেকে টোকিও জড়িয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে শি জিনপিংয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, চীন সবসময় আসিয়ানের ভালো প্রতিবেশি, ভালো বন্ধু এবং ভালো সহযোগী ছিল, আছে এবং থাকবে। চীন কখনই ছোট দেশগুলোর প্রতি আধিপত্য জারি রাখতে চাইবে না এবং তাদের আকার-আয়তনের সুবিধাও নেবে না। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ দূর করতে আসিয়ানের সঙ্গে কাজ করবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে সার্বভৌমত্বের দাবি করছে চীন; আসিয়ানের সদস্য ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনও একই দাবি করেছে। এছাড়া ব্রুনাই, তাইওয়ান এবং মালয়েশিয়াও দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশের মালিকানা দাবি করে।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইন-অধিকৃত একটি প্রবালদ্বীপে ফিলিপাইনের নৌকা লক্ষ্য করে জলকামান নিক্ষেপ করেছে চীনের উপকূলরক্ষী বাহিনীর তিনটি নৌযান। যানে জলকামান ছোড়ার এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়েছে ফিলিপাইন।
পরদিন চীনের ওই কর্মকাণ্ডকে ‘বিপজ্জনক, উসকানিমূলক এবং অন্যায্য’ বলে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে ফিলিপাইনের যানে চীনের সশস্ত্র আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা স্বার্থে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটি।
আসিয়ানের এই সম্মেলনে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে বলেছেন, তিনি বিবাদকে ‘ঘৃণা করেন’ এবং আইনের শাসনই বিরোধ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায়। এটি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কের জন্য ভালো নয়।
ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম আসিয়ান জোটের সদস্য।
মিয়ানমার নেই
সম্মেলনে শি জিনপিং বলেছেন, এই অঞ্চল ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো পরাশক্তির প্রতিযোগিতা এবং দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চীন ও আসিয়ান ‘স্নায়ুযুদ্ধের গ্লানি দূর করেছিল’ এবং যৌথভাবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছিল।
স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাভাবনার জন্য চীন বারবার যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে তার মিত্রদের উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বেইজিং।
গত অক্টোবরে আসিয়ানের নেতাদের অনলাইন সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই সময় তিনি এই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এবারের সম্মেলন মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছাড়াই শুরু হয়েছে বলে আসিয়ানের বৈঠকের দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। এছাড়া এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র সাড়া দেননি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনাকারী মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং গত মাসে অনুষ্ঠিত আসিয়ানের বৈঠকে অংশ নেননি। মিয়ানমারে গণতন্ত্র এবং শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দায়ে আসিয়ানের নেতারা তাকে সম্মেলন থেকে বাদ দেন; যা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই জোটে নজিরবিহীন।
মিয়ানমার কনিষ্ঠ প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং আসিয়ানকে তার হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে সরে যাওয়ার জন্য পশ্চিমা চাপকে দায়ী করে। তবে চীন এই সম্মেলনে মিন অং হ্লেইংয়ের যোগ দেওয়ার বিষয়ে লবিং করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।