যদি কোনো ব্যক্তি ফজরের নামাজের সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হতে না পারে, তাহলে নিশ্চয় এর জন্য কোনো কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলো কী?
এক. রাত জেগে থাকা
অধিকাংশ লোক রাত জেগে সময় নষ্ট করে। কোনো ব্যক্তি যদি রাতের বেলা একটা বা দুইটা বাজে ঘুমাতে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি কি করে ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠবে? যেসব লোকেরা ফজরের সালাত কাজা করে, তাদের অধিকাংশ লোকই রাত জেগে থাকার কারণে কাজা করে।
দুই. রাতের খাবার
তারা দেরি করে রাতের খাবার খায়, এ কারণে তাদের পেটে খাবার জমা থাকে যা তাদের শরীরকে ভারী করে দেয়। মুসলিমদের জন্য রাতের খাবার দেরি করে খাওয়া ঠিক নয়।
তিন. ফজর আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান না হওয়া
কিছু লোক ফজরের সালাত আদায় করার জন্য ঘুম জেগে উঠার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। তারা বলে, ‘আমি যদি ঘুম থেকে উঠতে পারি, তাহলে ফজর পড়বো। আর যদি জাগতে না পারি, তাহলে পরে পড়ে নেবো।’
এটা মারাত্মক ভুল। কিছু লোক আমাকে বলেছেন, ‘আমি শেষ কবে ঘড়ির এলার্ম শুনে ফজরের সালাতের জন্য উঠেছিলাম তা আমার মনে পড়ে না। বরং এলার্ম দেওয়ার পূর্বেই ফজর সালাতের জন্য আমার ঘুম ভেংগে যায়।’ এটা কেনো? ‘কারণ ফজরের জন্য ঘুম থেকে উঠার জন্য আমি আগ্রহী এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকি। ঘুমানোর পূর্বে আমি ফজরের জন্য উঠার নিয়ত রাখি। এ কারণে আমার এলার্ম দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।’
অতঃপর শায়খ আনিজি বলেন, এ কারণে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।
চার. গুনাহ ও পাপ করা
অতিরিক্ত পানাহার মানুষের শরীর ভারী করে তুলে। গুনাহর কাজে লিপ্ত হলেও তা মানুষের রূহ (আত্মা) এবং ক্বালব (অন্তরকে) ভারী করে দেয়। ইবাদতের জন্য শক্তি না পাওয়ার বড় একটা কারণ হচ্ছে গুনাহ। কিছু মানুষ গুনাহর কাজ করে ঘুমাতে যায়। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ‘একজন মানুষ কীভাবে গুনাহর কাজ করে ঘুমাতে যায়?’ উত্তর হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি) দ্বারা মানুষ গুনাতে লিপ্ত হচ্ছে। কিছু লোকেরা পর্নো ভিডিও না দেখে, নারীদের অশ্লীল বা নগ্ন ছবি না দেখে— ঘুমাতে পারে না।
একইভাবে কিছু নারী খারাপ জিনিস দেখে ঘুমাতে যায়। এমন লোকেরা যে বিছানায় ঘুমায়, সেই বিছানাতেই গুনাহর কাজ শেষে ঘুমাতে যায়। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের ‘জিকির’ দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে— দিন শেষ করতে উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের ঘুমানোর পূর্বে সূরা আল-কাফিরুন পড়ে শির্কের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। (কিন্তু আফসোস!) কিছু মানুষ পর্নোগ্রাফিক ভিডিও বা হারাম জিনিস দেখে ঘুমাতে যায়। কিছু মানুষ আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর উম্মতের (মাঝে কোন মুসলিম ব্যক্তির) গিবত করে ঘুমাতে যায়। তারা অমুকের গিবত করে, অমুককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অপমান করে মানুষের মাঝে প্রচার করে। এমন ব্যক্তিরা কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করে? এমন লোকেরা কিভাবে ফজরের সালাতের জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠার আশা করে?
আমি এই উদাহরণগুলো এ কারণে উল্লেখ করলাম, যাতে করে যারা ফজরের সালাতের জন্য ঘুম থেকে উঠতে পারে না, তারা যেন নিজেই নিজের হিসাব গ্রহণ করে (তারা কোন গুনাহর কাজে জড়িত)?
আমিরুল মুমিনিন উমর (রা.) আমাদের উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘হিসাব গ্রহণের সম্মুখীন হওয়ার আগেই তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব নাও এবং মহা সমাবেশে হাজির হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার হিসাব-নিকাশ নেয়, কিয়ামাতের দিন তার হিসাব অত্যন্ত হালকা ও সহজ হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ভূমন্ডলের ও নভোমন্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ০৫) সকল সৃষ্টিজগতকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে এবং সেইদিন কোনো কিছুই তার সামনে গোপন থাকবে না।
শায়খ ড. আজিজ বিন ফারহান আনিজির মূল লেখাটি অনুবাদ করা হয়েছে।
বিএসডি/এসএসএ