যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এই বাজেটে মার্কিনদের জন্য নানা জনহিতকর কাজের পরিকল্পনা নিয়েছেন বাইডেন। জলবায়ু ও পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যয়বহুল এমন বাজেট প্রস্তাবটি পাস করার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও রিপাবলিকানদের বিরোধিতার কারণে সিনেটে আর্থিক প্রস্তাব পাস করা কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বাইডেনের আর্থিক পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার পর রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বাজেট প্রস্তাবকে ‘ভয়ংকরভাবে ব্যয়বহুল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
রিপাবলিকানরা বলছেন, বাজেট পাস করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে ২০৩১ সালের মধ্যে ১১৭ শতাংশ ঘাটতি দেখা যাবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাঁর ক্ষমতার প্রতিবছরে ঘাটতির বাজেট পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর ক্ষমতার শেষ বছরে বার্ষিক অর্থ ব্যয়ের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব ছিল ৪ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের।
বাইডেনের বাজেট প্রস্তাবে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে মার্কিন সামরিক স্থাপনা পেন্টাগনসহ অন্যান্য সরকারি বিভাগের ব্যয় নির্বাহের জন্য। বাজেট প্রস্তাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরিবারগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য রয়েছে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
বাইডেন বলেছেন, জনগণের জন্য সরাসরি এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
বাইডেনের বাজেট পরিকল্পনার মধ্যে জলবায়ু ও পরিবেশের জন্য ৮০০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বা ক্লিন এনার্জির জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তিন এবং চার বছরের শিশুদের প্রি–স্কুলের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০০ বিলিয়ন ডলার। আমেরিকার সব কমিউনিটি কলেজে বিনা মূল্যে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ জন্য বাজেটে ১০৯ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে। আমেরিকার কর্মজীবীদের সবেতন পারিবারিক ছুটি দেওয়া হবে। এ জন্য বাজেটে ২২৫ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে। আমেরিকার সড়ক ও ব্রিজ উন্নয়নের জন্য এক বছরে ১১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। মার্কিনদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারিত করার জন্য ১১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে।
হোয়াইট হাউসের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সিসিলিয়া রাউজ স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এখন অস্থিরতা লক্ষণীয়। তবে ভবিষ্যতে মার্কিন অর্থনীতিতে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে স্থির হবে বলে তিনি আশা করেছেন।
কিছু কিছু উদারনৈতিক অর্থনীতিবিদও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উচ্চাভিলাষী বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বিল ক্লিনটনের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ল্যারি সামারস। তিনি বলেছেন, ব্যাপক সরকারি অর্থ ব্যয় মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা নিয়ে আসতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফেডারেল রিজার্ভ ঋণের ওপর সুদের হার বাড়াতে হবে। পরিণতিতে আমেরিকার অর্থনীতি মন্দার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অর্থ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী ১২ বছরে মার্কিন অর্থনীতিতে সাড়ে ১৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি যোগ হবে। হোয়াইট হাউস বলছে, কর বৃদ্ধি করে আগামী ১৫ বছরে সব ঘাটতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।
কোনো কোনো মহল থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উন্নয়ন পরিকল্পনা তাঁর ক্ষমতার মেয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টরা বাজেট পরিকল্পনা উপস্থাপন করে থাকেন। কংগ্রেসকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দিতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক করবেন। সমঝোতার নানা উপায় খুঁজবেন। কংগ্রেসে উভয় দলের সমঝোতা না হলে ফেডারেল সরকারের কাজকর্মও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন ঘটনা আগে ঘটেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত অগ্রাধিকার কর্মসূচিগুলোর অনেকটাই নির্ভর করছে এই বাজেট প্রস্তাব পাস হওয়ার ওপর। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে হোয়াইট হাউস থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক বিতর্ক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মহা বাজেট পরিকল্পনা নিয়েই আবর্তিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।