নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় তিন জন গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ( ৩০ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিকের ছোট ভাই মিজানুর রহমান। একই নির্বাচনে মেম্বার পদে হেরেছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন। তবে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহেদ আলীকে সমর্থন দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। মিজানুর রহমান মনে করছেন, মোশাররফ ও তার কর্মীদের সমর্থনের কারণে নৌকা জিতেছে আর তিনি হেরেছেন। এ নিয়ে ভোটের পর থেকে মোশাররফ হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ মিজানুর।
মঙ্গলবার রাতে মিজানুর রহমান তার সমর্থক জসিম উদ্দিন জসু মেম্বার ও আলেক মিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক কর্মী নিয়ে মোশাররফ হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নবী হোসেন ও আমির হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। একই সময়ে ইউনিয়ন মহিলা লীগের সভাপতি জোসনা আক্তারের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন জন গুলিবিদ্ধসহ ১২ জন আহত হন।
এ ছাড়া আহত সুবহান (২৮), জায়েদা খাতুন (৩০) ও নুরজাহানকে (৩২) গুরুতর অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনে মোশাররফ হোসেনের ৫টি ঘর, ৪টি মোটরসাইকেল, ১টি প্রাইভেটকার ও ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় পুড়ে গেছে।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হওয়ায় মোশাররফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। হামলা চালিয়ে তারা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে।
কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহেদ আলী বলেন, নির্বাচনের পরদিন থেকে নাওড়া এলাকার নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িতে একের পর এক হামলা, লুটপাট চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ও র্যাব তাদের গ্রেফতার করছে না। মামলাও নিচ্ছে না। এর আগে ২৭ নভেম্বর আট জন গুলিবিদ্ধের ঘটনায় পুলিশ এখনও মামলা নেয়নি।
রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হবে।
এ ব্যাপারে পরাজিত প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, হামলায় আমাদের কোনও লোক জড়িত নয়। পরাজিত মেম্বার মোশাররফ হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়ী মেম্বার জসিম উদ্দিন জসুর কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু বলেন, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
গত ১১ নভেম্বর কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহেদ আলী নৌকা প্রতীকে ৫৫৮ ভোট বেশি পেয়ে জয়লাভ করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান হেরে যান। ১২ নভেম্বর নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ নেত্রী লিপি আক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনের কাছে জিম্মি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।