সিলেট-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে তুলকালাম চলছে। সদ্য পার্টিতে যোগদানকারী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বাবুলকে একটি বৈঠক থেকে জাপার প্রার্থী ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা। এরপরই ঝড় শুরু হয় সিলেট জাপায়।
জেলা জাপা ও সংসদীয় আসনের তিন উপজেলার নেতারা বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের ষড়যন্ত্রকারী আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযোগ এনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি তুলেছেন।
এমতাবস্থায় নেতাকর্মীর তোপের মুখে পড়ে প্রার্থিতা ঘোষণার বিষয়টি অস্বীকার করছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা।
নেতাকর্মীর অভিযোগ, সিলেট-৩ আসনে কেন্দ্র থেকে এখনো জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়নি। কতিপয় নেতা গোপন বৈঠক করে সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন, নজরুল ইসলাম বাবুলই সিলেট-৩ আসনে জাপার প্রার্থী। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুসে উঠেছেন জেলা জাতীয় পার্টি ও সংসদীয় আসনের তিন উপজেলার নেতাকর্মীরা।
তাদের দাবি, কেন্দ্রকে পাশ কাটিয়ে কতিপয় নেতা কিভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করেন।
বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়ে পার্টি থেকে বহিষ্কারদের দাবি তোলেন। গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির নাম ভেঙে গত ২৫ মে নগরের নাইওরপুলের একটি অভিজাত হোটেলে বসে নজরুল ইসলাম বাবুলকে জাপার প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের জাপার নেতাকর্মী।
পৃথক প্রতিবাদলিপিতে নেতারা বলেন, যারা হোটেলে বসে মিথ্যা অপপ্রচারের মাধ্যমে সিলেট-৩ আসনের জাপার প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম বাবুলের নাম প্রচার করছেন, তারা কেউ এলাকার ভোটার নয়। তারা জাতীয় পার্টিকে হেয় প্রতিপন্ন করার পাঁয়তারায় লিপ্ত। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তারা।
বিবৃতিতে সই করেন জাতীয় পার্টির সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক শাহ আলম, সদস্য সচিব মো. তাজ উদ্দিন আহমদ। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সভাপতি মো. আশিকুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক কামাল রেজা। বালাগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রহিম,সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী। জাতীয় যুব সংহতি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আখতার হোসেন, সদস্য সচিব মোহাম্মদ বুলবুল আহমেদ।
সিলেট-৩ আসনে জাপার প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা জাতীয় পার্টিও। শুক্রবার (২৮ মে) গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জেলা কমিটির আহ্বায়ক কুনু মিয়া ও সদস্য সচিব উছমান আলী জানান, সিলেট-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেননি। অথচ গত মঙ্গলবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় নগরের একটি অভিজাত হোটেলে বসে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নাম ভাঙিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুলকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেন পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. গিয়াস উদ্দিন ও আব্দুল্লাহ সিদ্দিকিসহ গংরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা জেলা জাতীয় পার্টির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সব নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় কমিটি, জাপার চেয়াম্যান জিএম কাদের এ বিষয়ে অবগত নয়। প্রার্থী ঘোষণায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, যারা মো. নজরুল ইসলাম বাবুলকে অগঠনতান্ত্রিকভাবে জাপার প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য পার্টির ব্যানার ব্যবহার করে দলের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন।
বিবৃতিতে তারা এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পার্টির সব নেতাকর্মী সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা পরদিনই সিলেট-৩ আসনে জাপার সম্ভাব্য প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে নিয়ে গণসংযোগ করেন বলেও অভিযোগ নেতাকর্মীর।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ খালেদ বলেন, ‘আমি প্রার্থীর প্রার্থিতা ঘোষণা করার কে? ওইদিন চা চক্রর আয়োজন করেন জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন, এমনটি জানিয়ে আমাদের কাছে সহযোগিতা চান। আমরা তাকে আশ্বস্ত করে বলি, জাপা থেকে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে পার্টির চেয়ারম্যান যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার জন্য আমরা মাঠে নামবো।
তিনি বলেন, ওই বৈঠকে তিনি ছাড়াও পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ও সাবেক জেলা সহ-সভাপতি বশির উদ্দিন লস্কর উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা কেউই প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি। এছাড়া তার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ছাপানো বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে উপস্থিত থাকা সাংবাদিক দুলাল হোসেন ছবি তুলেছেন। যদিও দুলাল বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
সিলেট-৩ আসনে উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা কমিটির সদস্য সচিব উছমান আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল ও তোফায়েল আহমদ। তাদের অনেকেই পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার আগেই মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।