সৌদি আরবের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পৌঁছেই সাতদিন হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে কর্মীদের। পৌঁছানোর পর দুদফায় করোনা পরীক্ষাও করাতে হবে। দুইবার নেগেটিভ এলে সপ্তম দিনে হোটেল ছাড়া যাবে। কিন্তু কোয়ারেন্টিনে শেষ হওয়ার পর দেখা দিয়েছে নতুন বিপদ। কোনও কোনও হোটেল সাতদিন পার হলেও করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। আবার কোথাও নমুনা নিলেও রিপোর্ট ছাড়াই বের করে দিচ্ছে কর্মীদের। ফলে দ্বিতীয় দফার টেস্ট রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিপদে আছেন প্রবাসী কর্মীরা। রিপোর্ট ছাড়া হোটেল থেকে বের হলে সৌদি সরকারের জরিমানা বা শাস্তির আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
গত ১০ মে সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দেয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করলে সাতদিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ২০ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই নিয়ম অনুযায়ী হোটলের খরচ বহন করতে হবে যাত্রীকেই। হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে গুনতে হবে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
সৌদি আরবের জেনারেল অথরিটি অব সিভিল এভিয়েশন আরও জানিয়েছে, প্রথমবার করোনা পরীক্ষা করতে হবে পৌঁছানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ৬ষ্ঠ দিনে করাতে হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
জানা গেছে, সৌদি এয়ারলাইন্স জেদ্দার জন্য নূন্যতম ৫৫ হাজার এবং রিয়াদের জন্য নূন্যতম ৬৫ হাজার টাকা খরচ হিসেবে নিচ্ছে। সাতদিন হোটেলের থাকার পাশাপাশি এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যাওয়ার গাড়ি, খাবার, করোনা পরীক্ষার খরচ সেখানে অন্তর্ভুক্ত।
প্রবাসী কর্মীদের অভিযোগ, হোটেলের মান অনুযায়ী খাবার ও সেবা দেওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশি কর্মীদের। সিঙ্গেল রুম বুক করলেও হোটলে গিয়ে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। আবার দ্বিতীয় দফায় করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়েও বিপদে আছেন তারা। এসব সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া হোটেল ছাড়া নিয়ে আতঙ্কে আছেন প্রবাসী কর্মীরা। কারণ সম্প্রতি সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন করে নিয়ম করেছে, কেউ যদি করোনাভাইরাস ছড়ায় তাকে ৫ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি ওই ব্যক্তি প্রবাসী হয়, তবে তাকে শাস্তির পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং তিনি আর কোনও দিন দেশটিতে যেতে পারবেন না।
সৌদি প্রবাসী রমিজ মোহাম্মদ কাজ করেন দাম্মামে। ২৩ মে জেদ্দায় পৌঁছান। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম অবতরণের স্থান হিসেবে তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন জেদ্দা পার্ক হোটেলে। সেখানে সাতদিন কোয়ারেন্টিন শেষে যাবেন দাম্মামে।
শুক্রবার রমিজ মোহাম্মদ বলেন, এই হোটেলে মিসরীয় নাগরিকরাও আছেন। কিন্তু তাদের খাবারের মান ও আমাদের মানে অনেক তফাৎ। সবাই সমান টাকা দিচ্ছি। তারপরও বৈষম্য। এই হোটেলে আমাদের প্রতি রুমে দুজন করে দিয়েছে। আজ রাতে (শুক্রবার) আমার কোয়ারেন্টিন শেষ হবে। কিন্তু এখনও আমার করোনা পরীক্ষা হয়নি। কে কোয়ারেন্টিনের ছাড়পত্র দেবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।
একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন হাবিব মজুমদার। তিরি বলেন, ‘যে হোটেলে উঠেছি তার খাবার খাওয়ার মতো নয়। আমার অ্যাপে কোয়ারেন্টিনের সময় আরও ১১ ঘণ্টা দেখাচ্ছে। অথচ হোটেলের লোকজন বলছে, আমি এখন যেতে পারবো। হোটেল প্যাকেজের মধেই ছিল ট্রান্সপোর্ট, খাবার ও দুইবার করোনা টেস্ট। এর জন্য খরচ হয়েছে ৬৫,৬০০ টাকা। অথচ করোনা টেস্টের জন্য নমুনা নিয়ে কোনও রিপোর্ট ছাড়াই বের করে দিচ্ছে হোটেল থেকে। আবার আমার কোম্পানি বলে দিয়েছে, করোনার রিপোর্ট ছাড়া তারা আমাকে গ্রহণ করবে না।’