ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দুজনের বাড়ি যশোরে। তাদের একজনের নাম আলামিন ও অন্যজনের নাম তানিয়া। আলামিন নামে ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। সে ভ্যানচালক মনু মিয়ার ছেলে। তানিয়ার বাড়ি অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায়।
ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের ভিডিওতে থাকা যশোরের আলামিন ও তার কথিত স্ত্রী তানিয়াকে শনাক্ত করেন তাদের প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে আলামিন ও তানিয়ার এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে আলামিনের বাবা মনু মিয়া বলেন, আলামিন স্বভাব-চরিত্রে ভালো না। তার কাছে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসত। তারা আমার ঘরে বসেই ইয়াবা খেত। যে কারণে আমি আট মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিই। শুনেছি, আলামিন ভারতে গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কী করছে জানি না, তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, গত ২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এই নির্যাতনের জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে আটকের খবরও দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রচার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন। তরুণীটিকে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার মূল হোতা টিকটক হৃদয় বাবু পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, স্ত্রী-সন্তান ফেলে আলামিন আট মাস আগে ভারতে চলে যান। ভাইরাল ভিডিওতে তিনি গোলাপি রঙের ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের ব্যান্ড রয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। তানিয়ার বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে। তার বড় বোন সোনিয়া ভারতে থাকেন। অভয়নগর এলাকায় তানিয়ার আগেও দুটি বিয়ে হয়েছে। তানিয়াকে আলামিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছেন। আলামিন বা তানিয়া কেউই এখনো আটক হননি। তারা ভারতের ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছেন।
এদিকে ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আলামিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকেন। সেখানে ‘রাফি’ নামের একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আলামিনরা বস বলে সম্বোধন করেন।
সূত্রটি জানায়, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আলামিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। যাওয়ার আগে তিনি চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যান। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবায় আসক্ত ‘রাফিকে’ উপহার দেওয়ার জন্য এই ইয়াবা তিনি বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যান। নির্যাতনে জড়িত আলামিন ও তানিয়া গাঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া ডালিম ও সবুজ নামের আরও দুই যুবক ছিলেন, তারাও পালিয়ে গেছেন। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রকিবুজ্জামান বলেন, আমি নির্যাতনের ঘটনাটি শুনেছি। তবে এর সঙ্গে আমার কর্ম এলাকার কেউ জড়িত কি না, জানা নেই।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন বলেন, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তিনি জানেন। ওই ঘটনায় জড়িত কারও বাড়ি যশোরে, এমন তথ্য এখন তারা পাননি। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার এক তরুণীকে ভারতের কেরেলা রাজ্যে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশেরই রিফাতুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক জড়িত বলে সত্যতা পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। অভিযুক্ত যুবক রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা।