ভারতে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যু কমছে। আজ মঙ্গলবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ৯ এপ্রিলের পর দেশটিতে সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হলো গত ২৪ ঘণ্টায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৭৯৫ জন।
সবশেষ এই তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪। মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৫ জন।
আগের ২৪ ঘণ্টায় (রোববার) ভারতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদিন ৫০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ১২৮ জন। শনিবার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ৪৬০ জন। শুক্রবার শনাক্ত হয় ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯২১। মারা যান ৩ হাজার ৬১৭ জন
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও ওডিশা।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে নতুন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এই সংক্রমণের জেরে মৃত্যুও হচ্ছে।
২৪ মে ভারতে দৈনিক করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা গত ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম দুই লাখের নিচে নামে। এদিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও চার হাজারের নিচে নামে।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ে।
৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভারতের দখলে। ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। আর মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরেই রয়েছে ভারত।
ভারতে সংক্রমণ ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়। ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্য টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাবসহ নানা গুরুতর সংকটে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় ভারতের পাশে এসে দাঁড়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।