বিনোদন ডেস্ক :
সাত বছরের নিচের তিন শিশুসন্তানই বাড়ির পাশের রেললাইনের ওপর বসে খেলছিল। এর মধ্যেই চলে আসে ট্রেন। কাছে থাকা এক যুবক ছুটে এসে শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কেউই বাঁচতে পারেনি।
চিলাহাটি থেকে ছুটে আসা দ্রুতগামী রূপসা ট্রেনে কাটা পড়ে চারজনেরই মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে বাড়ির পাশে রেললাইনে খেলছিল ওই তিন শিশু। এ সময় চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনটি নীলফামারী স্টেশন ছেড়ে সৈয়দপুর যাচ্ছিল। ট্রেন কাছাকাছি আসায় শিশু তিনটিকে বাঁচাতে এগিয়ে যান সালমান ফারাজি শামীম।
তাদের উদ্ধারের আগেই ট্রেন চলে আসায় কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় লিমা ও শিমু। গুরুতর আহত সালমান ও শিশু মমিনুরকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সালমান ফারাজি তাঁর বাড়ির কাছের রেললাইনের একটি সেতুর নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাহারাদার ছিলেন। পরিবারে আছে তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার (২৫), সাড়ে চার বছরের মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত ও মা চিনু বেওয়া (৫০)।
কালের কণ্ঠের নীলফামারী প্রতিনিধি নিখিল ভূবন জানালেন, সালমান ফারাজি প্রায় তিন বছর আগে ঢাকার এফডিসিতে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। ওনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনই জানালেন সালমান বেশ কয়েকটি সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর বাড়িতে ফিরে এসে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন সালমান।
শামীমের ভায়রা, জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার আকরাম হোসেন (২৭) বলেন, সালমান একসময় ঢাকায় এফডিসিতে চাকরি করতেন। সেখানে চাকরির সুবাদে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। সেখান থেকে দুই বছর আগে বাড়ি এসে সংসার দেখাশোনা করছিলেন। এরই মধ্যে তাঁকে বউবাজারে রেলপথে সেতুর সংস্কারকাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বুধবার সকালেও তিনি দায়িত্ব পালনের জন্য সেখানে অবস্থান করছিলেন।
আকরাম বলেন, ‘এলাকার যেকোনো মানুষের বিপদে তাঁকে এগিয়ে যেতে দেখেছি। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া নেশায় পরিণত হয়েছিল তাঁর।’
গ্রামবাসী জানায়, শামীম ছিলেন পরোপকারী এক যুবক। গ্রামের কেউ অসুস্থ হওয়ার খবর এলেই তাকে নিয়ে ছুটতেন হাসপাতালে। বুধবার সকালেও ওই তিন শিশুকে ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ট্রেন যখন প্রায় কাছাকাছি, তখনো অবুঝ তিন শিশু খেলছিল রেললাইনে। সালমান ছুটে গিয়ে এক শিশুকে কোলে তুলে সরে আসার সময় ট্রেনের ধাক্কায় লাইনে পড়ে আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
শামীমের মামি রুমি আক্তার জানান, শামীম সাত বছর আগে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে মিফতাহুল জান্নাত নামের ছয় বছরের এক মেয়েসন্তান রয়েছে। শামীমের বাবা আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন অনেক আগে। স্ত্রী, মেয়ে ও মা চিনু বেওয়াকে নিয়ে তাঁর পরিবার।
সালমান ফারাজি শামীম নামের এই শিল্পীর বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত বড়ুয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তো আসলে অনেক ছবিতে কাজ করি, আমি হয়তো দেখলে চিনতে পারি। তার ছবি থাকলে পাঠাবেন দয়া করে। আর সে যদি শিল্পী হয় তাহলে আমাদের দিক থেকে অবশ্যই একটা উদ্যোগ নেব। শিল্পী সমিতিতে এ নিয়ে আমরা মিটিংয়ে বসব। এটা সত্যিই বড় খবর। একজন ছোট আর্টিস্ট অথচ কী বিশাল হৃদয়।’
আমিনুর রহমান জেসন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এত বড় মহৎ একটা কাজের জন্য তাকে কি সারা জীবন মনে রাখার জন্য কিছুই করা যায় না! বৃহৎ আকারে না হোক, অন্তত নীলফামারীর মানুষ যেন তাকে মনে রাখে, সে জন্য নীলফামারীতে যারা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন তারা চাইলে হয়তো তার জন্য একটা সৌধ করতে পারেন নীলফামারীর কোনো একটি মূল পয়েন্টে, যেখানে লেখা থাকবে তার মানবিকতার কথা, তার সাহসিকতার কথা। সবাই দেখবে, জানবে আর তার কাছ থেকে উৎসাহ পাবে কিভাবে মানুষ হতে হয়। স্যালুট সালমান।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান কালের কণ্ঠকে জানালেন, তিনি মুম্বাইয়ে আছেন, দেশে ফিরে বিষয়টি দেখবেন।
বিএসডি/জেজে