নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে হানাদারমুক্ত হয় শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চল। যদিও বর্তমান শরীয়তপুর জেলা মুক্ত হয় ১৫ অক্টোবর। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় মাদারীপুর মহকুমার অর্ন্তগত থাকায় মাদারীপুরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডিসেম্বর শরীয়তপুর মুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়।
ভেদেরগঞ্জ, নড়িয়া, গোসাইরহাট, জাজিরা ও পালং থানা নিয়ে মাদারীপুর মহাকুমার এই অঞ্চলকে বলা হতো পূর্ব মাদারীপুর, যা পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে এ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় আর একটি মহকুমা। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ হাজী শরীয়তুল্লাহর নামানুসারে নবগঠিত মহকুমার নামকরণ করা হয় শরীয়তপুর। ১৯৮৬ সালে দেশের সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয় এই জেলায়।
এখানে প্রয়াত কর্নেল (অব.) শওকত আলী (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) মুক্তিবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য সরকার তাকে বীরবিক্রম খেতাব দেয়। এ সময় তার সহযোগী হিসেবে স্টুয়ার্ড মুজিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাদারীপুর মহকুমাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মাদারীপুর ও পূর্ব মাদারীপুর দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
তারা জানান, মে মাসের ২২-২৩ তারিখে রাজাকার, আলবদর, আলসামসদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় সদর থানার মধ্যপাড়া গ্রামে। মধ্যপাড়া ও আশপাশের এলাকার শিশু, নারী, পুরুষ মিলে ৩৭৪ জনকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী।
এ ছাড়া মধ্যপাড়ার শতাধিক নারী পুরুষকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মাদারীপুর এ আর হাওলাদার জুট মিলে। সেখানে নারীদের ধর্ষণ ও পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিফলক হিসেবে মধ্যপাড়ায় বধ্যভূমিতে কোনও মতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে মাত্র ৮১ জন শহীদের নাম উঠে এসেছে, যারা এলাকার মানুষ ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় নিতে আসা অসংখ্য হিন্দু নারী-পুরুষ হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তাদের কোনও তালিকা নেই।
এ ছাড়া সদর থানার উত্তর দক্ষিণ মধ্যাপাড়া, মালো পাড়া, ঝালো পাড়া, কাশাভোগ, নীলকান্দি, আংগারিয়া বাজার, ধানুকা, পাল বাড়ি, কোটাপাড়া বাজার, নড়িয়া থানার গোলার বাজার, তেলিপাড়া, ভূমখাড়া বিঝারি গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় হানাদার বাহিনী।জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভেদরগঞ্জের মহিষারে দুই শতাধিক হানাদার ও তাদের দোসরদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন আক্কাছ মিয়া। মহিষারেই ওই ১১ শহীদকে গণকবর দেওয়া হয়।
রাজাকারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পালং থানায় মুক্তিযোদ্ধারা ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে অপারেশন চালায়। এ অপারেশনে দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অসংখ্য হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার মারা যায়। এই থানা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার ইদ্রিস আলী, আবুল কাসেম মৃধা ও মুক্তিযোদ্ধা আলী আজম সিকদার।
১৮ জুলাই ডামুড্যার দামুদর নদীতে একটি লঞ্চে করে পাক হানাদাররা এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা হামলা চালায়। এতে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পানিতে ডুবে মারা যায়।