রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের সড়ক যোগাযোগ আধুনিক, দ্রুত এবং আরামদায়ক করতে চলছে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ।
‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পের কাজ বিস্তৃত করা হচ্ছে মহাখালী পর্যন্ত।
প্রকল্পের নকশা ছিল বক্স গার্ডারের মাধ্যমে উড়ালসেতু নির্মাণ করা হবে। এখন নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এলিভেটেড অংশের নির্মাণ কার্যক্রমে বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডার পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ অংশের মধ্যে উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত ৬ লেন বিশিষ্ট এলিভেটেড সেতু নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ৪২ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই অংশে ছয়টি এলিভেটেড স্টেশন, ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতুও নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ অংশের প্রকল্প পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, প্রকল্পের মূল নকশা পরিবর্তন করা হচ্ছে। নকশা পরিবর্তন করে বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডারে হবে উড়ালসেতু। এর ফলে ৪১ কোটি টাকা সাশ্রয়ও হবে। আমরা ইতোমধ্যেই আই গার্ডারের কাজ শুরু করে দিয়েছি। বড় কথা বক্স গার্ডার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ন্যারো রোডে এটা কঠিন। এটা ঝুলিয়ে রাখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চায় না। এজন্য নতুন করে নকশা পরিবর্তন করছি। বক্স গার্ডার দিলে সড়কের নিচের অংশ বন্ধও হবে। একইসঙ্গে এর আওতায় বিমানবন্দরের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক আন্ডারপাস। আশকোনা ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে এই আন্ডারপাস নির্মাণ হবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, নর্থ বিআরটি নামে পরিচিত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট, যেখানে যানজটে পড়লে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত করিডোর। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এই করিডোরের মাধ্যমে ২১টি জেলা শহর যুক্ত রয়েছে। ২০১৪ সালের সার্ভে অনুযায়ী প্রতিদিন উভয় দিকে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার থেকে ৪৪ হাজার যা ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজারে। ব্যস্ততম এই সড়কে যানবাহন চলাচল অব্যাহত রেখে বক্স গার্ডার স্থাপন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডার নির্মাণের প্রস্তাব দাখিল করে। ঠিকাদারের প্রস্তাবে বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডারের নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪১ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে এবং কাজ সম্পদানের লক্ষ্যমাত্রা ২ বছর কমে যাবে। বিকল্প সড়কের প্রয়োজন না হওয়া, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম হওয়া এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশের সঙ্গে একই সময়ে এলিভেটেড অংশ চালু করা ইত্যাদি সুবিধাগুলো উল্লেখ করা হয়।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমইসি ইন্টারন্যাল প্রাইভেট লিমিটেড ২০১৫ সালে এলিভেটেড অংশের ডিজাইন সম্পন্ন করার পর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জিংসু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেডকে ২০১৭ সালের অক্টোবরে নিয়োগ দেওয়া হয়। যার চুক্তি মূল্য ৯৩৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশে এবং ০৮ টি র্যা ম্পে মোট ১৬৩টি স্প্যান রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে ৭৮টি স্প্যানে আই গর্ভার এবং ৮৫টি স্প্যান বক্স গার্ডার নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পের এলিভেটেড অংশের বক্স গার্ডার থেকে আই গার্ডারে রূপান্তরের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে প্রকল্পের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সভায়ও বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডার ব্যবহার করার প্রস্তাবে সুপারিশ করা আলোকে বক্স গার্ডারের পরিবর্তে আই গার্ডার ব্যবহার করার প্রস্তাবটি অর্থায়নকারী সংস্থা এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে কাজ করা হবে। বক্স গার্ডার অংশ আই গার্ডার পদ্ধতিতে নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণ এবং কাজ চলাকালীন সড়কে যানবাহন চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা হচ্ছে এবং ধুলা বালি নিরসনে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
প্রকল্পের মোট ১ হাজার ৯০৬টি সার্ভিস পাইলের মধ্যে ১ হাজার ৩৩৩টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২৮৯টির মধ্যে ১৭২টি পাইল ক্যাপ, ২৮৯টির মধ্যে ১৭০টি পিয়ার স্টিম এবং ১২৮৭টির মধ্যে ৪৮৩টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। টঙ্গী সেতুর পর থেকে চেরাগআলী পর্যন্ত মূল সড়কের দুই পাশে ড্রেনেজ কাজের ৬ হাজার ৩২৭ মিটারের ৬ হাজার ১৭০ মিটার অংশে আরসিসি পাইপ স্থাপন করা হয়েছে এবং অন্য কাজ চলমান আছে।
প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে এবং সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিআরটি লেন বাস্তবায়নে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এরমধ্যে ১৬ কিলোমিটার অ্যাট গ্রেড সড়ক নির্মাণের দায়িত্বে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ নির্মাণের দায়িত্বে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এবং বাস ডিপো, সংযোগ সড়ক ও হাট বাজার নির্মাণের দায়িত্বে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।