চট্রগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রামের হালিশহর থানার ‘এ’ ব্লক ২ নম্বর রোডের হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা মো. আলম। প্রায় ৩১ বছর আগে আলমের নামে সাড়ে ৪ কাঠার একটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেয় চট্টগ্রাম হাউজিং এস্টেট। সেখানে শর্ত অনুযায়ী সময় মতো প্লটের কিস্তির টাকা পরিশোধ না করায় আলমের নামে বরাদ্দকৃত ৬ নম্বর প্লটটি বাতিল করা হয়।
পরবর্তীতে জালিয়াতি করে মো. সামসুদ্দিন সুজন নামে বরাদ্দ তালিকার বাইরের এক ব্যক্তির কাছে ওই প্লটটি হস্তাস্তর করে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওই প্লটের দখলে আছে এই সুজন। অভিযোগের প্রক্ষিতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে এমন প্রতারণা ও জালিয়াতির করার সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি অনুসন্ধান শেষে ওই প্লটের অনিয়মের ঘটনায় মামলা দায়ের করার সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক বরাবরে। ওই প্রতিবেদনে অভিযুক্ত মো. আলম, সামসুদ্দিন সুজন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন ছাড়াও আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে বরাদ্দকৃত প্লটের অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ১৪ নভেম্বর হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ‘এ’ ব্লকের দুই নম্বর রোডে ২০১টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত চট্টগ্রাম হাউজিং এস্টেট। এই বরাদ্দ তালিকায় নাম না থাকার সত্ত্বেও ২৪টি প্লট ২৪ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের তদন্তে উঠে আসে। ওইসব প্লটগুলোতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট দায়ের করে এই অবৈধ প্লট মালিকরা। রিটের এই মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯০ সালের ১৬ নভেম্বর হালিশহর হাউজিং এস্টেটের সাড়ে ৪ কাঠার প্লটটির ৯৩ হাজার ৬২৬ টাকা প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রথম কিস্তির কোনো টাকা জমা হয়নি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে মো. আলম তার বরাদ্দকৃত প্লটের প্রথম কিস্তির টাকা যে তারিখে টাকা জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন ওইদিনটি ছিল শুক্রবার।
এছাড়া মো. আলমের পক্ষে কিস্তির কোনো টাকা জমা হয়নি বলে দুদক সমন্বিত কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তার নিকট অফিস আদেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক কার্যালয়ের অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার (হিসাব) নাছরিন আক্তার পরবর্তীতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মো. আলমের নামে বরাদ্দকৃত প্লটটি বিধি মোতাবেক বাতিল করার পরিবর্তে উল্টো ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট ১৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা জমা দেয় মো. আলমের পক্ষে সামসুদ্দিন সুজন। তার মধ্যে সুদ জমা দেয় ২ লক্ষ ৯ হাজার ৭২২ টাকা। এই টাকা জমা দেখিয়ে মো. আলমের নামে বাতিল হওয়া প্লটটি জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে সামসুদ্দিন সুজনকে হস্তাস্তর করে চট্টগ্রাম হাউজিং এস্টেট কর্তৃপক্ষ। বরাদ্দকৃত সাড়ে চার কাটার জমির বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আলমের প্লটে বসবাস করছেন সুজন। হালিশহর ‘এ’ ব্লকের বাসিন্দা এই সুজনকে মানুষ জমির বেচা-কেনার মধ্যস্থাকারী হিসেবে চিনেন। দুদক সূত্রে জানা যায়, অসৎ উদ্দেশ্যে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর মো. আলমকে মূল্য পরিশোধের দায়মুক্তির ছাড়পত্র দিয়ে নোটিশ দেয় চট্টগ্রাম হাউজিং এস্টেটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এস্টেট) মো. নাছির উদ্দিন। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, হালিশহর আবাসিক এলাকার ‘এ’ ব্লকের দুই নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাণিজ্যিক প্লটটি মো. আলমের নামে বরাদ্দপত্র জারি করা হয়। বরাদ্দ গ্রহিতা মো.আলম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছেন। যা সম্পন্ন প্রতারণা বলে দুদক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর হালিশহর দুই নম্বর রোডে ফইল্যাতলী খালপাড় বাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম হাউজিং এস্টেটের ৬ নম্বর প্লটটির বাড়ির দেয়ালে লেখা রয়েছে, ‘নিলামে বরাদ্দকৃত প্লটের মালিক চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা মৃত ইউসুফের পুত্র মো. আলম। মো. আলম থেকে ক্রয়সূত্রে মালিক মো. সামসুদ্দিন গং।
’ জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মো. আলম সঠিক সময়ে প্রথম কিস্তির টাকা জমা না দেওয়ায় তার প্লটটি বাতিল করা হয়েছে। আমি মো. আলমের পক্ষে যেটা দায়মুক্তি সার্টিফিকেট দিয়েছি সেটা আমার ডিপার্টমেন্টের বিষয়। ১৯৯২ সালে যে সময় বরাদ্দকৃত প্লটটি পেয়েছিল মো. আলম, ওই সময় আমি চাকরিতে যোগদান করিনি।
এছাড়া সুজন নামে কাউকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বরাদ্দ পেয়েছে মো. আলম। বর্তমানে আলমের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল হওয়ায় হাউজিং থেকে তার নামে কোনো দলিলও হয়নি।’ জানতে চাইলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের? (চট্টগ্রাম-১) উপপরিচালক আবু সাঈদ বলেন, ‘সম্প্রতি হালিশহর হাউজিংয়ের ৬ নম্বর অনিয়মে মাধ্যমে বরাদ্দকৃত প্লটের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি কমিশন বরাবরে। সেখানে অভিযুক্ত তিন জন ছাড়াও আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বিএসডি/এসএফ/জীবন কৃষ্ণ দেবনাথ