জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর জবাবদিহিতা, সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে ওষুধ এবং জনবল সংকট এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে। কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তি গোপনীয়তা নিশ্চিতে পৃথক বিশ্রামাগার বা অপেক্ষা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উঠে এসেছে জরিপে।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং অপরাজেয় বাংলাদেশ আজ রোববার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি সম্মেলন কক্ষে এই গবেষণা ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে।
‘ওয়াই-মুভস’ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দেশের ২৬টি কার্যকর কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ওপর সংস্থা দুইটি কমিউনিটি স্কোরকার্ড জরিপ পরিচালনা করে। ৫৬৫ জন কিশোরী ও ৩১১ জন কিশোর জরিপে অংশ নেয়।
স্থানীয় এনজিও ইয়েস বাংলাদেশের সহায়তায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সেবা গ্রহণকারী কিশোর-কিশোরী এবং সেবাপ্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করে ২০২১ সালের মে এবং নভেম্বর মাসে এই স্কোরকার্ড জরিপ চালানো হয়।
ওয়াই-মুভস প্রকল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাজিয়া সুলতানা। স্কোরকার্ড ফলাফলের ওপর সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন নিলুফার নার্গিস পূর্বাশা।
তিনি বলেন, স্কোরকার্ড জরিপের মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফল মতে, জেলা এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে সেবাকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে এই সময়ে। জরিপে অংশগ্রহণকারী কিশোর-কিশোরীরা কেন্দ্রের বিশ্রামাগার, নিরাপদ ও সুপেয় পানি এবং মেয়ে ও ছেলেদের জন্য পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তবে ঢাকার মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ লালমনিরহাট, নীলফামারি, নওগাঁ, ঝালকাঠির মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। একই চিত্র কক্সবাজারের বাহারসরা, যশোরের সাগরদাঁড়ি, কুড়িগ্রামের বারুবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও।
নীলুফার বলেন, জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর অনুপস্থিত দীর্ঘদিন ধরে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক (মা ও শিশু) ও লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএইচ) ড. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, এই স্কোরকার্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে মনিটরিংয়ে সহায়তা করবে। সরকারের সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলো পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ৫৯২টা মডেল ইউনিয়ন হেলথ সেন্টার তৈরি করছে, যেগুলোর আদলে পরবর্তীতে আরও স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে। এই কেন্দ্রগুলোতে কৈশোরবান্ধব সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, করোনা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। যেখানে সাধারণ চিকিৎসাই নিশ্চিত করা কঠিন ছিল, কৈশোরবান্ধব সেবা নিশ্চিত আরও বড় চ্যালেঞ্জ।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জয়নাল হক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি নতুন সংযোজন। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। যার যার অবস্থা থেকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। সেবাপ্রদানকারীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিতেও জোর দেন তিনি।
স্কোরকার্ডের মাধ্যমে এই জরিপে উঠে এসেছে, অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী সেবাপ্রদানকারীদের আচরণে সন্তুষ্ট। তবে উল্টো চিত্রও পাওয়া গেছে কিছু কেন্দ্রে, যেমন- নওগাঁ, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও খাগড়াছড়ির মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এবং কক্সবাজারের বাহারছড়া ও বরগুনার নলটানা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।
কেন্দ্রগুলোতে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- ওষুধ ও জনবলের অপ্রতুলতা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তি গোপনীয়তা নিশ্চিতে পৃথক বিশ্রামাগার বা অপেক্ষা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে জরিপে অংশগ্রহণকারী কিশোর-কিশোরী এবং সেবাপ্রদানকারীরা।
কমিউনিটি স্কোরকার্ড রিপোর্টে আরও দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকালে নানা জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সীমিত সংখ্যক কিশোরই যৌনপ্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছে। স্কুল এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে নিয়মিত কর্মঘণ্টার পর শিক্ষার্থীবান্ধব সেবা কর্ম ঘণ্টা নিশ্চিতের সুপারিশও উঠে এসেছে এই জরিপে।
ডিজিএফপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড. তৃপ্তিবালা বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে ও পথে যথাযথ তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড এবং নির্দেশনা বোর্ড নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমাদের অঙ্গিকারবদ্ধ হতে হবে। সরকারের বাজেটের যথাযথ ব্যবহারেও জোর দেন তিনি।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর আফরোজ মহল বলেন, নাগরিকদের এবং বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করে চলা সকলের দায়িত্ব রয়েছে। স্থানীয় সরকারের সাথে আরও শক্তিশালীভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা আগামী ১০ বছর এই বিষয়ে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা খুব শিগগিরই ভোলাতে কিশোর-কিশোরীদের মেন্সট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সেবা নিশ্চিতে কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।
বিএসডি/এসএফ