রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় প্রবাহিত মেঘনা নদীতে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে মেঘনা নদীবেষ্টিত অনেক গ্রাম পড়েছে হুমকির মুখে।
এরই মধ্যে উপজেলার চরকাছিয়া, চরজালিয়া, চরইন্দ্ররিয়া, চরপক্ষী গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া চরঘাসিয়া, কুচিয়ামারা, চরপাঙ্গাসিয়া, চরকাছিসহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত সয়াবিন অর্থনৈতিক অঞ্চলও রয়েছ হুমকির মুখে।
শনিবার সন্ধায় ইউএনও বালু উত্তোলনের সংবাদে মেঘনা নদীতে অভিযান চালান। এ সময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বর্তমান নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য দিদার মোল্লাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও নদী থেকে একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল এবং রায়পুর থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তবে অভিযানের সময় অন্যরা পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের মিয়ারহাটবাজারের পাশে মেঘনা নদী ও আখনবাজারের পরে ব্রিজসংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে তিনটি ড্রেজার বসিয়ে এলাকায় সিন্ডিকেট তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে হাত করে মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
নবনির্বাচিত দক্ষিণ চরবংশী ইউপি সদস্য দিদার হোসেন মোল্লা বলেন, অনেকেই মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় এ বালু উত্তোলন হয়ে আসছে।
ওই প্রভাবশালী নেতার নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তিনি জানান, উত্তর চরবংশী ইউপি আলতাফ মাস্টারের ঘাট এলাকা, উত্তর চরআবাবি ইউপির সাজু মোল্লারঘাট এলাকা, দক্ষিণ চরআবাবিল ইউপির উদমারা গ্রামসহ প্রায় সব ইউনিয়নে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চরবংশী ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজী ও উত্তর চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন যুগান্তরকে জানান, এই দুটি ইউনিয়নের মেঘনা নদী এলাকায় প্রায় ১৫ ব্যক্তি বালু উত্তোলন করছেন। কোনো ব্যক্তি তাদের কথা শুনছেন না। প্রশাসনের সহযোগিতা চান তারা।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্যজন দাস বলেন, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। শনিবার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পানিরঘাট এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করায় ঘটনাস্থলে গিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪(গ) ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে একই আইনের ১৫(১) ধারায় দিদার মোল্লাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে একটি ড্রেজার মেশিন জব্দ করা হয়।
অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন, রায়পুর কর্তৃক মোবাইল কোর্ট নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।