গাজীপুর প্রতিনিধি:
প্রান্তিক মানুষ যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য ২০১৮ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরের আটটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) বিতরণ করা হয়েছিল একটি করে অ্যাম্বুলেন্স। তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, পরিকল্পনার অভাব এবং তিন বছরেও ব্যবহার না করায় এগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্সগুলো হস্তান্তর করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিজস্ব অর্থে কিনেছিলেন তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। তখন বলা হয়েছিল গ্রামের অসহায়-দরিদ্র রোগী ও প্রসূতি মায়েদের যেন দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা সম্ভব হয় সেজন্য এগুলো দেওয়া হয়েছে। এর তত্ত্বাবধান করবে ইউনিয়ন পরিষদ।
বিশেষভাবে তৈরি ব্যাটারিচালিত এসব অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় এগুলো এখন প্রায় পরিত্যক্ত। কিছুর ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় ভাঙারির দোকানে।
জানতে চাইলে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনি নিজ তহবিল থেকে অ্যাম্বুলেন্সগুলো কিনেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল উপজেলাজুড়েই স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। যেমন গ্রামের দরিদ্র মানুষ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যেন অন্তত বিনা খরচে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেওয়া যায়। আটটি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে তার ১৬ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তিনি যতদিন দায়িত্বে ছিলেন ততদিন এসব বিষয়ে নজরদারি করেছেন। পরের বছর তার মেয়াদ শেষ হয়। পরে নির্বাচনে তিনি আর বিজয়ী হতে পারেননি। এর পরই মূলত নজরদারির অভাবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।’
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্সগুলো পড়ে থাকতে দেখা যায়। কোনোটির ব্যাটারি নেই, আবার কোনোটির চাকা নেই। বেশিরভাগেরই যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, ‘হঠাৎ করেই ডেকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এগুলো পরিচালনার জন্য কোনো চালক যেমন ছিল না, তেমনি এগুলো দেখভালের জন্যও আমাদের তেমন কোনো লোক নেই। দিনের পর দিন এগুলো ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ পরিকল্পনা করে কাজটি করলে এতগুলো টাকা নষ্ট হতো না।’
রাজাবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এগুলো একটি ভালো উদ্দেশ্যেই হয়েতো তারা আমাদের দিয়েছিলেন। তবে এসব কাজের জন্য যা প্রয়োজন তা আমাদের ছিল না। পরে এগুলো আর ব্যবহার হয়নি। তবে কিছুদিন স্থানীয় গ্রাম পুলিশের উদ্যোগে চালু ছিল। পরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত।’
জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলমের কাছে অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষন দাস বলেন, উদ্যোগটা ভালো ছিল। তবে অ্যাম্বুলেন্সগুলো যদি আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রদান করা হতো তাহলে এমন বেহাল অবস্থা তৈরি হতো না।
বিএসডি/এসএফ