বাকৃবি প্রতিনিধি:
অতুলনীয় স্বাদ ও গন্ধের জন্য দেশ ও বিদেশে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মোহনীয় স্বাদের জন্য ইলিশকে মাছের রাজা বলা হয়, অনেকের মতে এটি পৃথিবীর মজাদার মাছ। এই ইলিশ মাছ দিয়ে বিশেষ কায়দায় স্যুপ ও নুডুলস বানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক দল।
ইলিশের শরীরে বিদ্যমান চর্বির বিন্যাসই জন্য মাছটি এতো সুস্বাদু। চর্বি বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণের ফলে খাবারে দুর্গন্ধ তৈরি করে। ইলিশের চর্বির সংরক্ষণ সক্ষমতা খুবই কম বলে ইলিশ-পণ্য তৈরি করে কক্ষ তাপমাত্রায় (২৫-৩০ডিগ্রি সে.) কিংবা ফ্রিজে -২০০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায় না। চর্বিকে সরিয়ে ফেললে স্বাদ ও গন্ধ দুটোই চলে যাবে।
তিন বছরের অধিক সময় গবেষণা করে ইলিশের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য পণ্য তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. একেএম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল। তিনি ইলিশ মাছ থেকে পাউডার ও কিউব তৈরি করেছেন; যা দিয়ে তিনি পরবর্তীতে স্যুপ ও নুডুলস বানিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন প্রধান গবেষক ড. একেএম নওশাদ আলম।
ইউএসএআইডির অর্থায়নে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আল শাহরিয়ার ও মো. সাজেদুল হক।
গবেষণা সম্পর্কে ড. নওশাদ আলম বলেন, ইলিশ অধিক আমিষ ও চর্বির মাছ। তবে ইলিশের চর্বি মোটেও ক্ষতিকর নয়। চর্বিতে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা ইলিশের স্বাদের জন্য দায়ী। এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
তিনি বলেন, ইলিশের চর্বিকে স্থিতিশীল করার জন্য গাজর থেকে আহরিত ক্যারোটিনয়েড বা বিটা-কেরোটিনকে ভেষজ এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। উদ্ভাবিত ইলিশ-পণ্য দিয়ে সারা বছর ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ পূরণ করতে পারবেন।
উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে গবেষক বলেন, নতুন পণ্যে আমিষ, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও অন্যান্য খনিজসহ ইলিশ মাছের সব পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এক হাজার টাকা দামের একটি ইলিশ মাছ থেকে ছোট আকৃতির প্রায় ২০০ কিউব তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি কিউবের বাজারমূল্য ২০ টাকা। একটি কিউব দিয়ে ইলিশের হুবহু স্বাদের এক বাটি স্যুপ তৈরি করা সম্ভব। ইলিশের স্বাদ অপরিবর্তিত রেখে কিউবগুলোকে রেফ্রিজারেটরে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
বিএসডি/ এলএল