নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীতের সবজির মৌসুমেও লাগামহীন খাদ্যপণ্যের বাজার। ভরপুর বাজারে পণ্য কিনতে দিশাহারা হতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বছরের এই সময় বেশির ভাগ সবজির দর ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর ৩০ টাকার নিচে নেমেছে- এমন একটি সবজিও এখনো বাজারে পাওয়া যায় না। বাজারে নতুন পিঁয়াজ এলেও দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার বেশি। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের বাজারগুলোতে পণ্যের দর নিয়ে দিশাহারা অবস্থা সব ক্রেতার। প্রসঙ্গত, গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছাতে সব ধরনের কৃষিপণ্যের দর কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর সেই বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে সবাইকে। কেন দর বাড়ছে বা কেন প্রতিটি পণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে- কেউ তার জবাব দিতে পারছে না।
অর্থনীতিবিদ, বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, উৎপাদন ও সরবরাহের ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর কারণেই দর কমছে না। কিছু মানুষের মুনাফার লোভের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। এরই প্রভাব সব খাতে।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি খুচরা দোকান কাঁচা সবজিতে ভরপুর। কোনো সবজি বা পণ্যের ঘাটতি নেই। বিক্রেতারা বলছেন, স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ফলে বাজার এখন ভরপুর। দামও তুলনামূলক কমেছে। এ ব্যাপারে বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা, দাম কমেছে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায়।
শীতের মৌসুম হিসেবে প্রতিবছর যে দাম থাকে এ বছর তার চেয়ে অনেক বেশি দরেই কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গতকাল ঢাকার বেশ কিছু সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সারা বছর বেশি দামে যে পণ্যটি ভোক্তাদের কিনতে হয় সেটি হলো টমেটো। সময় বিশেষে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। কিন্তু শীতের পুরো মৌসুমে দর ১৫ থেকে ২০ টাকায় নেমে আসে। এ বছর সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে এখন ৪০-৬০ টাকায়। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আলুর দর তুলনামূলক এই সময় এমনই থাকে। তবে এই সময় শিম বিক্রি হয় সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে। বর্তমান বাজার দর হিসেবে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। বরবটির কেজি ৫০-৭০ টাকায়। ফুলকপির পিস ৩০-৪০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সস্তা সবজি হিসেবে যে পণ্যটি ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য হিসেবে থাকে, সেটি হচ্ছে মুলা। গ্রামের বাজারে মুলার দাম না পেয়ে কৃষকরা ফেলে দিয়ে চলে যান। ঢাকায় সেই মুলার কেজি এখনো ৪০-৫০ টাকা। শালগমের (ওলকপি) কেজি ৩০-৪০ টাকা। অবশ্য আগের সপ্তাহের তুলনায় সবগুলো সবজির দর কিছুটা কমেছে। তবে বছরের সময় হিসাব করলে প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রোটিনের সহজ উৎস ব্রয়লার মুরগি বছরজুড়েই ক্রেতাদের ভুগিয়েছে। এখনো ভোগাচ্ছে এই পণ্যটি। সাদা মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০-১৫৫ টাকা। মানে দুই সপ্তাহে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের বাজার কোনো নিয়ম মেনে চলছে- এটা মনে হয় না। সম্ভবত কিছু মানুষ একসঙ্গে কল্পনা করছে- এখনি সময় মুনাফা করার। বাজারে সরবরাহ বাড়ছে কিন্তু বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দর কমলেও দেশের বাজারে দর বেশি। মানুষেরও যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। উত্তরণের উপায় কী- তা নিয়ে কারও ভাবনা নেই। কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের জিডিপিতে খুশি। কিন্তু এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।
অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দর বেশির ভাগ পণ্যের কমেছে। কিন্তু বছরের এই সময়ে যে দর থাকা উচিত তার চেয়ে এখনো অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর একটি কারণ হতে পারে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। কৃষকের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এসে শ্রমিকদের মজুরি হয়তো বেশি দিতে হচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে দরের ক্ষেত্রে। এটা একটি দুষ্ট চক্রের মধ্যে যেন পড়ে না যায় তার দিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি যেন লাগামহীন হয়ে না পড়ে তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষকের বাজার তৈরি করা উচিত। সাধারণ কৃষক সরাসরি বিক্রি করতে পারে না। ডিজিটাল কাঠামোগত সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে হয়তো উন্নতি হতে পারে। কৃষক ও সাধারণ ক্রেতারা উপকৃত হবে।
বিএসডি / আইপি