করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। আজ রোববার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন এ মন্তব্য করেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, সরকার সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যেন ভারতের অবস্থা না হয়, সে জন্য টিকা দিতে হবে। কিন্তু বাজেটে টিকার কোনো সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন নেই।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ থেকে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামীকাল সোমবার সম্পূরক বাজেট পাস হতে পারে।
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, বাংলাদেশে টিকার ট্রায়াল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল চীন ও রাশিয়া। কেন সেটা করা হয়নি, সে প্রশ্ন রেখে হারুন বলেন, আন্তর্জাতিক টিকা রাজনীতির শিকার বাংলাদেশ। যে কারণে চীন থেকে টিকা পাওয়া যাবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
হারুন বলেন, গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে বরাদ্দ ছিল, তা জনগণের কল্যাণে বা সঠিকভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণে কাজে এসেছে, এ কথা সরকার বলতে পারবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোরসহ যেখানে সংক্রমণ বেড়েছে, সেখানে অন্তত ১০০ শয্যার হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে মানুষ রাস্তায় মারা যাবে। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের সংস্কারও দাবি করেন।
হারুন বলেন, বাজেট অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। কারণ, করোনা বিবেচনায় সরকার বাজেট দিতে পারেনি। সরকারের নীতি এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গত রমজানে লকডাউন ছিল। ঈদে মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে ছিল। যে মানুষ ৫০০ টাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে রাজশাহী যেতে পারত, তাকে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। লঞ্চ বন্ধ করে ফেরিতে মানুষ পারাপার করা হলো। এতে সংক্রমণ বেড়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এগুলো কি সরকারের ব্যর্থতা নয়? সরকারকে কি এসবের দায় নিতে হবে না?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট প্রস্তাবের সমালোচনা করে হারুন বলেন, এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। এটা প্রত্যাহার করা উচিত।
সরকারি দলের সাংসদ আলী আশরাফ বলেন, করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যেও কালজয়ী নেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যেভাবে কোভিড মোকাবিলা করা হয়েছে, সারা পৃথিবী তার প্রশংসা করেছে। তিনি আরও বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে সদিচ্ছা থাকতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে। বড় চোরদের দুর্নীতি, অর্থ পাচারের মতো কার্যক্রমে ঘৃণায়, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এগুলোর বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা না বাড়ালে, দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে বাজেটের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।
সরকারি দলের আরেক সাংসদ মহিউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, কোভিডের কারণে আয় কমেছে। যে কারণে মূল বাজেটের চেয়ে সম্পূরক বাজেট কমে গেছে। তিনি মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা খাত আরও সম্প্রসারিত করা, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি আরও বলেন, সরকার স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। দেশে ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা বেশ প্রসারিত হয়েছে। এই ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এ জন্য একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি। একইভাবে কর কমিশন করারও পরামর্শ দেন তিনি।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, করোনার কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজের দরিদ্রতম অংশটি। তবে তাদের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ও ত্রাণ কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্যাকেজ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাজেট প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে সরকারি দলের সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়ে এসেছে। এসব দেখে বিএনপি, সিপিডি আবোলতাবোল বকছে।
সরকারি দলের সাংসদ সেলিমা আহমেদ বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও যথাযথভাবে কোভিড ব্যবস্থাপনা করে প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা অর্জিত হয়নি। কারণ, গত বছর দীর্ঘ সময় সবকিছু বন্ধ ছিল।
সরকারি দলের সাংসদ আবদুস শহীদ, তাহজিব আলম সিদ্দিকী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।