আগুন নেভার পরপরই ঘরে ছুটে যায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্মৃতি আক্তার। দেখে, ঘরের সবকিছুর সঙ্গে পুড়ে গেছে তার প্রিয় পড়ার বইগুলো। সব ফেলে বইয়ের পোড়া কাগজ হাতে ডুকরে কেঁদে ওঠে স্মৃতি।
পোড়া বই হাতে বাবা শহীদুলকে স্মৃতি বলে, ‘আব্বা, আমার তো সব বই পুড়ে গেছে। ক্যামনে আমি পড়ুম? আমি পড়তে চাই।’ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা বলেন, ‘মা রে, যত কষ্টই হোক, আমি আবার তোমার বই জোগাড় করব। তুমি পড়বা, মা।’
স্মৃতি রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তির বাসিন্দা। মা-বাবা ও দুই ভাইবোনের সঙ্গে বস্তির একটি ঘরে থাকত সে। গতকাল রোববার পড়াশোনা শেষে বইগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রেখে রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়েছিল স্মৃতি।
আজ সোমবার ভোররাত চারটার সময় আগুনের লেলিহান শিখা প্রথম চোখে পড়ে স্মৃতির বাবা শহীদুল ইসলামের। পরে তিনি স্মৃতিকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সবার সঙ্গে রাস্তায় যায় স্মৃতি। দেখে তাদের ঘর পুড়ছে। স্মৃতির তখন প্রথম মনে পড়ে তার পড়ার বইয়ের কথা। মনে পড়ে ঘরের সঙ্গে যে তার পড়ার বইও পুড়ছে।
কথা বলে জানা গেল, স্মৃতির বাবা আগে রিকশা চালাতেন। এখন হকার। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। সে মহাখালীর আমতলী হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। স্মৃতি আক্তারের ছোট্ট একটা বোন আছে। নাম সোহাগি আক্তার। বয়স নয় বছর। সেও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্মৃতির ছোট ভাই রহমত উল্লাহ। বয়স তিন বছর। করোনায় এক বছরেরও বেশি সময় স্কুল বন্ধ। স্মৃতির পড়তে ভালো লাগে। তাই স্কুল বন্ধ বা অনলাইন ক্লাসের সুযোগ না থাকলেও বাড়িতে লেখাপড়া করত সে।
স্মৃতি বলে, ‘আমি লেখাপড়া শিখতে চাই। আমার অনেক স্বপ্ন। কিন্তু আগুন আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।’
আজ ভোররাতে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে লাগা আগুনে স্মৃতিদের মতো আরও বহু মানুষের ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে মানুষের স্বপ্ন। পোড়া ঘরে ঢুকে মানুষ আহাজারি করছে। বস্তির এসব বাসিন্দার সবাই দিন আনে দিন খায়। সংসারের সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে বস্তির মানুষ।
ভোররাত চারটার দিকে ওই বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে হতাহত হওয়ার খবর না পাওয়া গেলেও ঘর হারিয়ে কয়েক শ মানুষ পথে বসেছে। অসহায় এসব মানুষ বলছে, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়া তাদের পক্ষে আবার ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হবে। তারা সহায়তা চেয়েছে।