নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রির সময় ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে হতাশ হয়েছেন তারা। তারা বলছেন, পেঁয়াজে এবারো তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
প্রতি মণ পেঁয়াজের মানভেদে পাইকারি বাজার দর বর্তমানে ১ হাজার ১শ থেকে ১ হাজার ২শ টাকা। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর বিঘাপ্রতি উৎপাদিত পেঁয়াজের মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা মণ। এতে বিঘাতে মণপ্রতি লোকসান হচ্ছে ৫ হাজার টাকারও বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জানা গেছে- জেলার ৫টি উপজেলায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৭ হাজার ৮০০ টন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৬২ হেক্টর জমির পেঁয়াজ। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পেঁয়াজ কম পাওয়া যাবে। গত বছর হালি ও মুড়িকাটা দিয়ে রাজবাড়ীতে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। তবে হালি পেঁয়াজ উঠলে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা কৃষি অধিদপ্তরের।
দৌলতদিয়া উত্তরপাড়া এলাকার পেঁয়াজ চাষি মজিদ শেখ বলেন, আমি এ বছর দুই একর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘায় আমার খরচ পড়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে পেঁয়াজের যে বাজার দর তাতে আমার বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। এত কষ্টে করে টাকা খরচ করে পেঁয়াজ লাগিয়ে যদি দামটাই না পাই তাহলে আমরা বাঁচব কীভাবে।
পাংশার পেঁয়াজ চাষি রহমান মণ্ডল বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়ায়াদের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে আমার দেড় একর জমির পেঁয়াজের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর উৎপাদন খরচই উঠবে না। সরকার তো পেঁয়াজ চাষিদের কোনো আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বালিয়াকান্দির জামালপুর এলাকার পেঁয়াজ চাষি রহমত আলী বলেন, এ বছর শুরু থেকেই মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কম। প্রতি মণ ১ হাজার ১শ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা করে পাচ্ছি। তারপর আবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বেচতে গেলে বস্তার জন্য ২ কেজি, ধলতা ২ কেজি বাদ দেয়। এতে মণপ্রতি ৪ কেজি বাদ যাওয়াতে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। এক মন পেঁয়াজ দিলে ৩৬ কেজির দাম পাচ্ছি। পাইকারি বাজারের এই পদ্ধতি বাদ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন।
রাজবাড়ী বাজারের পাইকারি মার্কেটের মোস্তাক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকার মো. মোস্তাক আহমেদ বলেন, মাত্র মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। পেঁয়াজের বাজার কেমন হবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর কিছুদিন যাক তাহলে বোঝা যাবে। তবে পাইকারি বাজারে বর্তমানে ১ হাজার ১শ টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে মাঠপর্যায়ের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর যুগান্তরকে বলেন, রাজবাড়ীতে প্রতি বছর ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর বেশির ভাগই উৎপাদন হয় গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দিতে। এ বছর ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়ায়েদের কারণে ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি- বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর ৩২ টাকা থেকে ৩৪ টাকা কেজি। দাম একটু কম হলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, চাষিরা যেন লাভবান হন সেজন্য সব সময় তাদের কৃষিবিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া লাভজনক উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও বলা হয়ে থাকে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বিএসডি/জেজে