নিজস্ব প্রতিবেদক:
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের গাজীপুরা শাখা পোস্ট অফিসে একজনের বদলে অফিস করছেন আরেকজন। সরকারের নির্ধারিত ওই শাখার পোস্টমাস্টার মোসা. শাকিলা শিরিন ঘর সামলাচ্ছেন এবং ওই সময়টায় তাঁর পরিবর্তে অফিস করেন স্বামী মো. আবু সুফিয়ান বাদল। তিনি রাতেও থাকেন ওই পোস্ট অফিসেই। পোস্টমাস্টার তাঁর স্বামীকে অবৈধভাবে দায়িত্ব দিয়ে নিজে বাড়িতে সংসার সামলাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে এই ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোস্ট অফিসটি বন্ধ রয়েছে। পোস্ট অফিসের বাইরে ঘোরাফেরা করছেন অফিসের পিয়ন মো. বাবুল হোসেন।
পিয়ন বাবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পোস্টমাস্টার স্যার আসবেন এই অপেক্ষায় বসে আছি। অফিসের চাবি পোস্টমাস্টারের স্বামী মো. আবু সুফিয়ান বাদলের কাছে। তিনি আসলে অফিস খোলা হবে। আমি এখানে প্রায় ১৭ বছর চাকরি করছি। এ অফিসের কোনো চাবি আমার কাছে নেই।’
ডাকঘর থেকে সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, অফিস যথা সময়ে খোলার জন্য চাবি অফিসের পিয়নের কাছে থাকার কথা। কিন্তু এই পোস্টমাস্টার এখানে যোগদানের পর থেকেই নিজে না এসে তার স্বামীকে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই অফিসের এবং অফিসের কাজকর্ম করেন নিজেই। সরকারি অফিস এখন তাঁর নিজের মতো করে পরিচালনা করছেন।
এদিকে, উপজেলার পোস্ট অফিস সংলগ্ন গাজীপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে উদ্ধার করা ওই রড চুরির পেছনে আছেন আবু সুফিয়ান বাদল, এমনই অভিযোগ রয়েছে। কারণ ওই পোস্ট অফিসেরই একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় রডগুলো। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে ঠিকাদার রডগুলো চিহ্নিত করে ১৯ খণ্ড রড নিয়ে যান এবং পোস্টমাস্টারের স্বামী আবু সুফিয়ান বাদলকে থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। বাকি রড পোস্ট অফিসের মধ্যে রয়েছে।
সেবা নিতে আসা কামাল হোসেন খান বলেন, ‘আবু সুফিয়ান বাদল পোস্ট অফিসে থাকার ফলে নানা অপকর্ম করে থাকেন।’ ভবন নির্মাণে নিয়োজিত সাব-ঠিকাদার মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘গাজীপুরা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সাইড থেকে বিভিন্ন সময়ে রড চুরি হয়। এ ঘটনায় সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা এসে গাজীপুরা শাখার পোস্ট অফিসের একটি কক্ষ থেকে চোরাই রড উদ্ধার করে এবং পোস্টমাস্টারের স্বামী আবু সুফিয়ান বাদলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
গাজীপুরা শাখার পোস্টমাস্টার মোসা. শাকিলা শিরিন মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাঝে মধ্যে অফিসে যেতে দেরি হলে আগে ভাগে চাবি নিয়ে আমার স্বামীকে পাঠাই। চুরি অভিযোগের বিষয় আমার জানা নেই।’
মির্জাগঞ্জ উপজেলা পোস্টমাস্টার শংকর চন্দ্র বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
বরগুনা পোস্ট অফিসের পরিদর্শক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘সরকারি অফিস যথা সময় খোলা হবে এটাই নিয়ম। পোস্ট অফিসের মধ্যে সরকারি লোক ছাড়া বাইরের লোক থাকার বিধান নেই। এমনকি পোস্ট অফিসের ভেতরে খাটসহ অন্য কোনো ব্যক্তিগত মালামাল থাকতে পারবে না। তবে গাজিপুরা শাখার ডাকঘরটি বন্ধ থাকলে বা কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে; তা তদন্ত করে পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’