নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে এখন গ্লাস বা কাচের বাজার রমরমা। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দেশে উৎপাদনের পরও প্রয়োজন পড়ছে আমদানির। তবু ধুঁকছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্লাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানা লিমিটেড’। বছর ঘুরলেই এই প্রতিষ্ঠানটির দায়দেনা বাড়ে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে বাজারে দেখাই মেলে না উসমানিয়ায় উৎপাদিত পণ্য।
জানা যায়, গত বছরের (২০২০) জুনে উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে আরও বিপদে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ১৫ মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ফের উৎপাদনে ফেরে উসমানিয়া। তবে কার্যক্রম শুরু হলেও পুরোদমে উৎপাদনে আসতে পারছে না। দুটি চুল্লি সংস্কার করে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে, যাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানায় কাচ উৎপাদন ও বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪৫ লাখ বর্গফুট। ওই বছর প্রকৃত উৎপাদন হয়েছিল ১০৯ দশমিক ৬৯ লাখ বর্গফুট। কম উৎপাদনের পরও উৎপাদিত কাচ বিক্রি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বিক্রি হয়েছিল ৯২ দশমিক ৮৯ লাখ বর্গফুট, যা বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরে প্রতিষ্ঠানটি গ্লাস উৎপাদন করছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার, যা অর্ধেক দামেও বিক্রি হচ্ছে না। গ্লাস বিক্রিতেই প্রায় আড়াই কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। সার্বিকভাবে বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে সরকার দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলে প্রতিষ্ঠানটি ফার্নেস চালু রেখে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পরে ২০২০ সালের জুনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কারখানার ফার্নেস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এসময় উৎপাদন ও বিপণন হয়নি।
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানায় সাদা রঙের গ্লাস শিট উৎপাদন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে। দেশে কাচশিল্পের গোড়াপত্তন ঘটে উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানার মাধ্যমে। বেসরকারি মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। একসময় দেশে গ্লাস সরবরাহের অন্যতম ভরসা ছিল এই প্রতিষ্ঠান।
শুরুতে বেশ লাভজনক ছিল। নব্বই দশকের পর থেকে নানান কারণে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ওই সময় থেকে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অধিক কর্মী নিয়ে বিপাকে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে উৎপাদন চালু থাকলেও কারখানার মেশিনারিজ দীর্ঘ ৬০ বছরের পুরোনো। এছাড়া ওইসব মেশিন নতুন আধুনিক প্রযুক্তির শিট গ্লাস উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন নয়। এজন্য উৎপাদন হলেও সেসব কাচের চাহিদা কম এবং খরচ অন্যান্য বেসরকারি কাচ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এখন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান এটি।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, পুরোনো প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যান্টের কারণে কারখানা শিট গ্লাসের চাহিদা বেড়েছে, তা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত গ্লাস উৎপাদন করতে পারছে না উসমানিয়া। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কনটেইনার গ্লাসের চাহিদা বিবেচনায় উসমানিয়ার জায়গায় সম্পূর্ণ নতুন একটি কনটেইনার গ্লাস প্ল্যান্ট স্থাপনের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এ উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে মার্কেট সার্ভে ও ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি একটি লাভজনক ও টেকসই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
বিএসডি/জেজে