নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, দেশে কোটি কোটি বেকার, কর্মসংস্থান নেই। অভাব অনটনে যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।
শনিবার (১ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু দাম কমলে দেশে তেলের দাম কমানো হয় না দাবি করে সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষক যে ফসল ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে, সেই ফসল রাজধানীতে হাত ঘুরে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গণপরিবহনের নৈরাজ্য থামছে না দাবি করে জিএম কাদের বলেন, গণপরিবহন কে নিয়ন্ত্রণ করছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সরকার গণপরিবহন চালাচ্ছে এটা বিশ্বাস করে না দেশের মানুষ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় গণপরিবহন যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজদের হাতে বলে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, চাঁদা না দিয়ে কেউ নিজের জমিতে বাড়িও করতে পারে না। কৃষিপণ্য সরবরাহে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম। ফুটপাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসহায়, দেখার কেউ নেই। দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে।
জিডিপি বাড়লে মানুষের পেট ভরে না বলে মন্তব্য করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, দেখা যাচ্ছে জিডিপি বাড়লে সাধারণ মানুষের উপকার হয় না। তাই জিডিপি নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। জিডিপি বৃদ্ধির বা উচ্চ মাত্রার প্রধান সুফল চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ সেটি তেমন হারে বাড়ছে না। বেকার সমস্যার সমাধানে প্রবৃদ্ধির কোনো ভূমিকা লক্ষণীয় নয়।
নির্বাচন কমিশন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে দাবি করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, একসময় নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর, এখন নির্বাচনে হচ্ছে ভয় আর আতঙ্কের নাম। দেশের মানুষ রক্তাক্ত নির্বাচন চায় না। দেশের মানুষ খুনোখুনির নির্বাচন পছন্দ করে না। ক্ষমতা ও কালো টাকার খেলায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কলুষিত হয়েছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে এমবিবিএস পাস চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার দাবি করে জিএম কাদের বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। দেশের মানুষ জানতে পেরেছে স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক লুটপাটের খবর। স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘ দিনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমরা জানতে চাই।
পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে গেছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ। আবারও ব্যর্থ হবে এমন নির্বাচন কমিশন আমরা চাই না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন করতে হবে। সময় নেই এ কথা বললে চলবে না। সরকার চাইলে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করে দেবো। প্রয়োজনে এ জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় সংসদ অধিবেশনে আমরা আইনটি তুলতে পারব। আমরা আর কারও সঙ্গে জোট করব না, আমরা এককভাবে নির্বাচন করব।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক ভালো ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে, বিএনপি নির্বাচনে নেই, জাতীয় পার্টি আছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে। অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেও হামলার শিকার হচ্ছেন। ভোটের ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে নৌকার মাঝি খারাপ অথবা দেশের মানুষ নৌকার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে। তবে, জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেউই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। ঘুণে ধরা সমাজ বদলে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সাহিদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
বিএসডি/এসএ