নিজস্ব প্রতিবেদক:
বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় ৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিহতদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের পরিবার হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদিকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গাবতলী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
জানা গেছে, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বুধবার সহিংসতায় এক নারীসহ ৪ জন নিহত হন। বুধবার সন্ধ্যায় ৯নং ওয়ার্ডের কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গুলিতে নিহতরা হলেন- গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা ইউনিয়নের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা খোকন মন্ডলের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৪০)। তিনি ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। মধ্যপাড়ার মৃত মকবুলের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৯), পশ্চিমপাড়ার মৃত ইফাতুল্লা প্রামাণিকের ছেলে আব্দুর রশীদ (৪৮), উত্তরপাড়ার মৃত ছহির উদ্দিন আকন্দর ছেলে খোরশেদ আকন্দ (৬৮)।
আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কালাইহাটা গ্রামের রাকিব (১৫), আব্দুল্লাহ্ (৪৫) ও ছহির উদ্দিন (৬০)। এছাড়া আলমগীর হোসেনের ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মেহেদী হাসানের গায়ে ১০ থেকে ১৫টি রাবার বুলেটের দাগ দেখা গেছে। সেও অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার কালাইহাটা গেলে স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল থেকে সুষ্ঠু ভাবেই ভোটগ্রহণ হয়। তবে বালিয়াদিঘির কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফল অন্যত্র ঘোষণা করা হবে এমন সন্দেহ থেকে বিকালে কেন্দ্রের পাশে সড়কের উপর নারী-পুরুষরা অবস্থান গ্রহণ করে। এসময় বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক ও নির্বাচন কর্মকর্তারা।
একপর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় ভোটকেন্দ্র সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ-বিজিবি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িও ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাবার বুলেট এবং গুলিবর্ষণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলিতে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী জানান, চারটি লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় গাবতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. জাকির হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। রাতে লাশ হস্তান্তরকালে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুম আলী বেগ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা জানান, তারা শহরে থাকেন। রিকশা চালিয়ে জীবন চলে তাদের। বুধবার এখানে এসেছিলেন ভোট দিতে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণির মেয়েকে নিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। তিনি স্বামীর মৃত্যুর বিচার চান। একই সাথে তার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
নিহত বৃদ্ধ খোরশেদ আলম আকন্দর ছেলে এরশাদ আকন্দ জানান, তার বাবা বিকালে কিছু শাক বিক্রির জন্য ওই হাটে যান। সেখানে শাক বিক্রিসহ ভোটের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার বাবা গুলিতে মারা গেছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকা শাজাহানপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদ জানান, ভোটের ফলাফল কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হবে- এটা স্থানীয়দের বারবার বলা হয়েছে। তারপরও তারা নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউএনওর গাড়ি, পুলিশ, বিজিবির গাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেন। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দরজা জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশেরও চেষ্টা করে।
এসময় ব্যালট বাক্স, ভোটকেন্দ্র রক্ষা, নির্বাচন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানমাল রক্ষায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে। স্থানীয়দের হামলায় তিনি পায়ে আঘাত পেয়ে আহত অবস্থায় রয়েছেন বলে দাবী করেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক বলেন, কালাইহাটায় ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে গাবতলী থানায় মামলা হয়েছে, গুলি করার কারণসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে।
বিএসডি/ এলএল