স্পোর্টস ডেস্ক
‘নতুন স্বাভাবিকতা’ শব্দটাও পুরোনো হতে চলল। কিন্তু সবকিছু স্বাভাবিক হতে পারলো কোথায়? করোনাভাইরাসের একের পর এক ঢেউ এসে দিশেহারা করে দিচ্ছে জনপদ। এবার কোভিড- ১৯ এর নতুন ধরণ ওমিক্রন থামিয়ে দিতে চাইছে যাপিত জীবন। বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এসেছে নানা নিষেধাজ্ঞা। বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে ওমিক্রনের ঢেউ। যদিও এখনই লকডাউনের ইঙ্গিত নেই। তবে ঠিকই করোনা নিয়ে যে সরকার বেশ সতর্ক তা স্পষ্ট। আসছে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে সারা দেশে ১১ দফা বিধি-নিষেধ কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার।
অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনে ঠিক এমন সময়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। ২০ ওভারের ধামাকা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে সরব চারপাশ। ড্রাফট শেষ, দল তৈরি। অনুশীলনেও নেমে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এবারের বিপিএল। কিন্তু তার আগে এই টুর্নামেন্টের আকাশে কালো মেঘ। অতিমারির এই সময়ে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের উৎসব এই আয়োজন কতোটা যৌক্তিক সেই প্রশ্নটাও এসেছে সামনে!
নতুন করে ১১ দফা বিধি-নিষেধ কার্যকর হলে নিশ্চিত করেই বিপিএল নিয়ে একটা শঙ্কা তৈরি হবেই। কারণ গ্যালারিতে দর্শক বসিয়ে এবার এই ২০ ওভারের ক্রিকেট আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল বিসিবির। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে গ্যালারিতে দর্শক না দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
নতুন করে ১১ দফা বিধি-নিষেধ কার্যকর হলে নিশ্চিত করেই বিপিএল নিয়ে একটা শঙ্কা তৈরি হবেই। কারণ গ্যালারিতে দর্শক বসিয়ে এবার এই ২০ ওভারের ক্রিকেট আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল বিসিবির। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে গ্যালারিতে দর্শক না দেখার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে এখন পর্যন্ত বিপিএলের ৬ দল ও আয়োজক বিসিবির পক্ষ থেকে টুর্নামেন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা ছড়ায়নি। বরং আগ্রহ নিয়ে দলগুলো মাঠে নামার অপেক্ষায়। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সিওও সৈয়দ ইয়াসির আলম ঢাকা পোস্ট-কে তেমনটাই জানালেন। মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে তার দল, ‘দেখুন, সরকারের বিধিনিষেধ এসে গেলে সেটি বিধিনিষেধের জায়গায় থাকবে। কোভিড পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, আমাদের সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোভিড চিন্তার বিষয়, কিন্তু এখানে আমাদের সকল ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, সংশ্লিষ্ট সবারই ডাবল ডোজ টিকা নেওয়া আছে। এর পাশাপাশি সবাই আমরা কোভিড যে প্রোটোকল আছে সেটা ফলো করছি।’
সৈয়দ ইয়াসির আলম মনে করেন ওমিক্রন নিয়ে ঝুঁকি থাকলেও বায়ো বাবলের এই আয়োজন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। তবে নিজেরাও এ নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতিটাও দিয়ে রাখলেন, ‘যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বিধিনিষেধ আসছে, আর এটা অনেক বড় একটা টুর্নামেন্ট, সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ফলো করে চলব। যেহেতু বড় বড় টুর্নামেন্টগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশেও এর আগে অনেকগুলো টুর্নামেন্ট হয়েছে, তো এটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আমাদের একটা ব্রিফিং হয়েছে আমরা সেই গাইডলাইন মেনে চলব।’
সরকারের বিধিনিষেধ এসে গেলে সেটি বিধিনিষেধের জায়গায় থাকবে। কোভিড পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, আমাদের সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোভিড চিন্তার বিষয়, কিন্তু এখানে আমাদের সকল ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, সংশ্লিষ্ট সবারই ডাবল ডোজ টিকা নেওয়া আছে। এর পাশাপাশি সবাই আমরা কোভিড যে প্রোটোকল আছে সেটা ফলো করছি।
সৈয়দ ইয়াসির আলম, সিওও, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
কিন্তু কথার ফোয়ারা দিয়ে তো আর সব মোকাবেলা সম্ভব নয়। কঠিন একটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফের পড়তে যাচ্ছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কারণ ৬ দলের আয়োজনে বেহুলার বাসর ঘর সাজিয়ে রাখলেও ফাঁক ফোকর দিয়ে এবার কোন দলে করোনা প্রবেশ করলে আর রক্ষা নেই। টুর্নামেন্ট থমকে যাবে। মাঝ খান থেকে অর্থের অপচয়টাও হবে!
এমন সময়ে দর্শকদের জন্য গ্যালারির দরজা বন্ধ করা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বিসিবিকে। নতুন করে বিধি-নিষেধের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হলেও এটা নিয়ে সরাসরি কিছুই বলছে না বিসিবি। মিডিয়া কমিটির নতুন চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ টিটু ঢাকা পোস্ট-এর সঙ্গে কথা লেতে গিয়ে বল ঠেলে দিলেন গভর্নিং কাউন্সিলের কোর্টে, ‘এই সিদ্ধান্তটা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল নেবে। যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে একটা বিধি-নিষেধ এসেছে করোনাভাইরাস ইস্যুতে, সেহেতু খুব দ্রুতই এর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরাও চাই যে দর্শক আসুক, কিন্তু সবকিছু মাথায় রেখেই আসলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমে যে সিদ্ধান্তটা ছিল সেটা দর্শক থাকবে। গত পাকিস্তান সিরিজের যে রকম দর্শক ছিল অন্তত সেইরকম দর্শক রাখা হবে। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি।’
তবে দর্শক ছাড়াও বিপিএলের জন্য প্রস্তুতিটা আছে দলগুলোর। চট্টগ্রাম চ্যালঞ্জার্সের সিওও সৈয়দ ইয়াসির আলম বলছিলেন, ‘বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সাথে আমাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে। ধরা যাক মাঠে কোন দর্শক নাই, এটা আপনার খেলার চিত্র বদলে দেবে না। আপনি মাঠে কতজন দর্শক রাখতে পারবেন? আর প্যান্ডেমিকের মধ্যে দর্শক মাঠে না আসতে পারলে তো তারা সবাই ঘরে বসে খেলা দেখবে। দর্শক তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির দিকটাও দেখতে হবে।’
বিপিএল আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও এ নিয়ে টুকটাক কথা বলছেন গণমাধ্যমে। ডাবল ভ্যাকসিন যাদের নেয়া আছে, তারা মাঠে গিয়ে বিপিএল ম্যাচ দেখতে পারেন-এমনটা ভেবে রাখলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলে আসায় বিকল্প ভাবছেন আয়োজকরা। কারণ দর্শক টানতে গিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বনাশটা তারা করতে চান না।
ডাবল ভ্যাকসিন যাদের নেয়া আছে, তারা মাঠে গিয়ে বিপিএল ম্যাচ দেখতে পারেন-এমনটা ভেবে রাখলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলে আসায় বিকল্প ভাবছেন আয়োজকরা। কারণ দর্শক টানতে গিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বনাশটা তারা করতে চান না।
অবশ্য চলমান আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা আশা দেখাচ্ছে বিপিএলের আয়োজকদের। মেলা বন্ধ হবে কি না সে বিষয়ে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে- তখন মেলা বন্ধ হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলবে।
বৃহস্পতিবার থেকে বিধিনিষেধ আরোপ হলে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে যানবাহন। উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না। ঠিক এমন সময়ে মুখে হাসি নেই বিপিএল আয়োজকদের। গত দুই বছরে এই অতিমারির সঙ্গে লুকোচুরি তো আর কম হয়নি। তবে যতো কিছুই হোক জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির এই সময়টা নষ্ট করতে রাজি নয় বিসিবি।
বিপিএল নিয়ে বিগত বছরগুলোতে কম বিতর্ক হয়নি। এবারও শুরুর আগে ফ্রাঞ্চাইজি সরে যাওয়া নিয়ে কম কথা হয়নি। প্লেয়ার ড্রাফট শুরুর আগেই আয়োজন নিয়ে দেখা গেছে অব্যবস্থাপনার ছাপ। কেউ বলছেন বিপিএল সার্কাস আবার বিপিএলকে প্রবলেম লিগও উপমা দিচ্ছেন। ওমিক্রণের এই সময়ে ফের বল মাঠে গড়ালে আরেক বিতর্ক সঙ্গী হতেই পারে বিপিএলের!
সূত্র: ঢাকা পোস্ট
বিএসডি/এসএ