পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’–এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে মিছিল বের করেন বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। মিছিলটি টিএসসি এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় যায়। সচিবালয় এলাকায় প্রেসক্লাবসংলগ্ন সড়কের মুখে আগে থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য সেখানে অবস্থান করছিলেন। ওই সড়ক দিয়ে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় নেতা-কর্মীরা ব্যারিকেড সরিয়ে সচিবালয় এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে বাম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেডের সামনেই সমাবেশ শুরু করেন।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘বর্তমান শাসকগোষ্ঠী শিক্ষা ও ব্যবসাকে এক করে ফেলছে। এত দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর আরোপ শিক্ষার্থীদের সমস্যায় ফেলবে। এসবের প্রতিবাদে কিছু দাবি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী সব সময় যেভাবে পুলিশের মতো পেটোয়া বাহিনী দিয়ে আন্দোলন দমন করতে চায়, আমাদের আন্দোলনেও তা-ই করা হলো।’
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষামন্ত্রী শুধু আশ্বাস দেন, তা বাস্তবায়ন করেন না। তিনি শুধু ছলনা করতে জানেন। তাঁর মতো শিক্ষামন্ত্রী আমাদের দরকার নেই। তাঁকে বলব, সৎসাহস থাকলে এক মাসের জন্য আমাদের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিন। ১৫ দিনের মধ্যে আমরা রোডম্যাপ ঘোষণা করে ১৬তম দিনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জং ধরা তালা আমাদের ভাঙতে হবে। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সবাইকে। এই সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। ফ্যাসিস্ট এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। কীভাবে সেই প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপ করা হয়? এর মাধ্যমে ব্যবসাকে হালাল করা হচ্ছে। শিক্ষা নিয়ে এই ছিনিমিনির ফলাফল ভালো হবে না। পুলিশকে বলতে চাই, যে সরকারকে আপনারা পাহারা দিচ্ছেন, তারা কিন্তু আপনাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনের কথা ভাবছে না। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া বর্তমান সরকার করোনার চেয়েও ক্ষতিকর। দেশে তারা লুটপাটের শাসন চালাচ্ছে। এই শাসনকে আমরা ভেঙে চুরমার করে দেব।’
এই সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সৈকত আরিফ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা বক্তব্য দেন।