ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি:
বুয়েট, মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ৩৩২ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে ঢাকা কলেজ প্রশাসন৷ বৃহস্পতিবার(২৭ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় ঢাকা কলেজের চারটি অডিটোরিয়ামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পৃথকভাবে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সংবর্ধনা পাওয়া এসব শিক্ষার্থী ২০২০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ন হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ৫৩ জন, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ জন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ৩২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮ জন, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন কলেজ ওয়েবসাইটে যারা নিবন্ধন করেছে এটি তাদের সংখ্যা৷ ভর্তির সুযোগ পাওয়া প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এর থেকেও বেশি৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। অধ্যক্ষ বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন কলেজ ঢাকা কলেজ তার শ্রেষ্ঠত্বের আসন ধরে রেখেছে ১৮০ বছর ধরে। এ বছর বুয়েট মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্বিদ্যালয়ের ৩৩২ জন চান্স পেয়েছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,তোমরা অগ্রজ তোমাদের দেখে ভবিষ্যতেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। যদি সব শিক্ষার্থী সুযোগ পেতো আমাদের আরো ভালো লাগতো৷
অধ্যক্ষ আরও বলেন, বর্তমানে দেশের দুই তৃতীয়াংশ জনশক্তি তরুণ। তরুণরা দেশের মূল চালিকাশক্তি। তাই তরুণদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই চ্যালেঞ্জ শক্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তোমরা যে যেই সাবজেক্টে পড় তোমাদের কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা অর্জন না করতে পারলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। দক্ষ জনশক্তির জন্যে উন্নত বিশ্বের দার উন্মুক্ত উল্লেখ করে বলেন, ইউরোপ বা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সব দেশেই শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির জন্যে কর্মের সুযোগ রয়েছে। তাই উন্নত বিশ্বের সাথে খাপ খাওয়াতে তোমাদের অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আজ আমরা দেখি আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ করছে। সেখানে আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব।
সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য কলেজ থেকে তোমার অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়েছো। তাই জাতির জন্যে তোমাদের অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। ঢাকা কলেজের জন্যেও অনেক বেশি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সমাজ ও দেশের জন্যে এই দায়বদ্ধতা কখনো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। দেশের দুর্নীতি কখনো কৃষক, শ্রমিক করেনা। শিক্ষিত মানুষেরাই দুর্নীতি করে। তাই নিজেদেরকে এসব থেকে দূরে থাকারও আহ্বান জানান।
ঢাকা কলেজ নিবিড় পাঠ ও পরিকল্পনা বিভাগের আহব্বায়ক অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ টি এম মঈনুল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা বিগত দুই বছর যে পরিশ্রম করেছি তার ফলাফল হিসেবে তোমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ এবং আমাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরেছ। তোমরা তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের প্রথম ধাপে নিজেদের সফল হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছ। বাকি জীবনের সব স্তরে সবার সফলতা কামনা করেন তিনি। আমরা তোমাদের বিগত বছর গুলোতে অনেক বেশি শাসনে রেখেছি,তোমরা হয়তো কষ্টও পেয়েছো। আজ হয়তো বুঝতে পারবে কেন আমরা তোমাদের শাসনে রেখেছি। পোশাক, চলাফেরা ও ক্লাসে উপস্থিতিতে কেন আমাদের এতো নজর ছিলো
ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড.মোঃ আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, ঢাকা কলেজের যে গৌরব ও কৃতিত্ব সেটা আবারও তোমাদের সফলতার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্যে আমি খুব আনন্দিত। তোমাদের যে স্বীকৃতি আজকে আমরা দিচ্ছি সেটা ভবিষ্যতে তোমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করবে৷ ঢাকা কলেজের এসব শিক্ষার্থী কৃর্তিমান মানুষ হিসেবে দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখবে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক পুরঞ্জয় বলেন, আমরা তোমাদের নিয়ে গর্ব করি। একটা সময় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার বিষয়ে অনেক কড়াকড়ি আরোপ করেছি। তোমাদের অনেক শাসনে রেখেছি। যার ফলে তোমরা এই আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছো। তোমাদের এই অর্জনে আমরা গর্বিত । তোমাদের রত্নগর্ভা মা- বাবার প্রীতি অজস্র সালাম।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহ ঢাকা কলেজের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি/ এলএল